প্রকৃতির অলংকার হয়ে ফুটেছে বুনো ফুল হলুদ কলমি

2 hours ago 5
যত্নে ফোটানো বাগানের ফুল ছাড়াও মৌসুমভেদে প্রকৃতিতে ফোটে নানা রং ও জাতের ফুল। প্রকৃতিতে ফোটা হরেক রকমের ফুল প্রকৃতিতে শোভা ছড়ায়, প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে। নানা রঙের এসব ফুল দেখে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যায়। এসব ফুলের মনভোলানো সৌন্দর্যে প্রকৃতিও সেজে ওঠে আকর্ষণীয় সাজে।  চোখজুড়ানো তেমনই এক বুনো ফুল হলুদ কলমি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতিকে অপরূপ সৌন্দর্য দিয়ে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। ঝোপঝাড় ও পথের ধারে ফোটা নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এ ফুল ফুলপ্রেমীসহ সববয়সী মানুষকে আকৃষ্ট করছে। হলুদ রঙের এ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য ঘিরে ওড়াউড়ি করছে মধুপায়ী কীটপতঙ্গসহ প্রজাপতিরাও। উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের গোমতী নদীর পাড়ে ও এর আশপাশের পরিত্যক্ত স্থানে অবহেলায় ও অযত্নে বেড়ে উঠেছে বুনো উদ্ভিদ হলুদ কলমি। এ ছাড়া উপজেলার আরও কিছু স্থানে এ উদ্ভিদের উপস্থিতি দেখা গেছে। এসব গাছে হলুদ রঙের চোখধাঁধানো ফুল ফুটেছে। চোখ আটকে যাওয়া এসব ফুলে প্রজাপতি ও মধুপায়ী কিছু কীট ভিড় জমিয়েছে। সবুজ প্রকৃতির মাঝে হলুদ ফুলের মোহনীয় সৌন্দর্য প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।  জানা গেছে, মেরেমিয়া হেডেরেসিয়া বৈজ্ঞানিক নামের হলুদ এই কলমি উদ্ভিদটি কনভলভুলাসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি কলমি পরিবারের সদস্য। এটি ইয়েলো মেরেমিয়া নামেও পরিচিত। এর ইংরেজি নাম আইভি উডরোজ। এর সাধারণ নাম ইন্ডিয়ান জালাপ। এর প্রধান বাংলা নাম হলুদ কলমি। এ ছাড়া এর প্রচলিত নাম বুনো ফুল, কলাডানা। এই উদ্ভিদটি সাধারণ উষ্ণ এবং আর্দ্র অঞ্চলের মতো জায়গায় জন্মায়। এর ফুল হলুদ রঙের। এই উদ্ভিদের কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। এটি একটি লতানো উদ্ভিদ। এর হৃৎপিণ্ড আকৃতির পাতার রং সবুজ। হেমন্ত ঋতুতে এ ফুল ফোটে।  হলুদ কলমি উদ্ভিদের সবুজ পাতা ১ থেকে ৩ সেমি লম্বা হয়। সপ্তাহ দুয়েক লতায় ফুল ফোটে। ফুলের রং হলুদ। প্রতিদিন সকালে নতুন ফুল ফোটে আর রোদ বাড়লে ধীরে ধীরে ফুলের পাপড়ি নেতিয়ে যায়। লতা জাতীয় এই উদ্ভিদটি পতিত জমি ও সড়কের পাশে জন্মে। বীজ থেকে বংশবিস্তার করে। সারা বছর এদের চোখে না পড়লেও ফুল ফুটলে এটি দৃষ্টিগোচর হয়। এ দেশে আরও একটি হলুদ কলমি দেখা যায়, তবে এর ফুলের বর্ণ একরকম হলেও দেখতে ফুল ও পাতায় পার্থক্য রয়েছে। আকার আকৃতিও ভিন্ন। এ প্রজাতির আদি নিবাস ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় পুরাতন বিশ্ব থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এছাড়াও এটি পশু খাদ্য এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এই উদ্ভিদটি সড়কের পাশের ঝোপঝাড়ে, পরিত্যক্ত জায়গায় ও বনাঞ্চলে বেশি জন্মে।  গোমতী তীরবর্তী বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, গোমতী পাড় দিয়ে চলাফেরার সময় হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ে হলুদ রঙের এ ফুল। এ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ না হওয়ায় উপায় নেই। অনেকেই দেখি নিজেদের মোবাইল ফোন দিয়ে এ ফুলের ছবি তুলে নেন। একই এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান সজল বলেন, এ সময়টায় গোমতী তীরের প্রকৃতিতে ফুটেছে মোহনীয় সৌন্দর্যের ফুল হলুদ কলমি। নান্দনিক এই ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয়রা। সবুজ প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে এই বুনো হলুদ কলমি ফুল।  ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, বুনো হলুদ কলমি উদ্ভিদটি সচরাচর চোখে পড়ে না। তবে শুনেছি গোমতী নদীর পাড়ে ও উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় এ উদ্ভিদটি রয়েছে। এ উদ্ভিদের ফুল অসাধারণ সুন্দর। হলুদ রঙের এই ফুল ফুটলে প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠে। হলুদ রঙের এ ফুল মানুষকে আকৃষ্ট করার মতো অনন্য সুন্দর। তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদটির ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। নানা রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে এটি সহায়ক। তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Read Entire Article