তিনি নিজে কোটি কোটি ভক্তের প্রিয় নায়ক। ভালোবেসে তারা তাকে বলিউডের হি-ম্যান বলে ডাকতেন। আজকাল অবশ্য বৃদ্ধ ধর্মেন্দ্রকে সবাই ধর্মজি বলেই সম্মান করেন। সেই গণমানুষের নায়কও আরেক নায়কের ভক্ত ছিলেন। কেবল ভক্ত বললে ভুল হবে। ছিলেন পাগল ভক্ত। তিনি হলেন দিলীপ কুমার। এই অভিনেতার সৌন্দর্য, সুদর্শন চেহারার মায়াবী হাসি, স্মার্টনেস, ব্যক্তিত্বে একেবারে বুঁদ হয়ে আছেন ধর্মেন্দ্র। আজও নিজের ঘরে টানিয়ে রেখেছেন দিলীপ কুমারের বিশাল এক ছবি।
সিনেমায় অভিনয় জীবনের শুরুতে ধর্মেন্দ্র ছিলেন দিলীপ কুমার বলতে অজ্ঞান। তার চোখে একমাত্র পারফেক্ট নায়ক ছিলেন দিলীপ কুমার। সেই ভালোবাসা থেকেই একদিন তিনি নিঃসংকোচে ঢুকে পড়েছিলেন দিলীপ কুমারের বাড়িতে।সেটাও বিনা অনুমতিতে। পরে সেই ঘটনা রূপ নেয় আজীবনের এক মধুর স্মৃতিতে।
আরও পড়ুন
সব গুজব থামিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন ধর্মেন্দ্র
বিজেপি থেকে এমপি হয়েও যে কারণে রাজনীতি ছেড়ে দেন ধর্মেন্দ্র
ধর্মেন্দ্র তার বইয়ে জানিয়েছেন মজার সেই গল্প। তখন ধর্মেন্দ্র বলিউডে নতুন। সিনেমার জগতে প্রবেশের আগেই তিনি ছিলেন দিলীপ কুমারের অন্ধভক্ত তিনি। মুম্বাইয়ে এসে একদিন আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। তিনি হঠাৎই ঢুকে পড়েন দিলীপ কুমারের বাড়িতে। তার নিজের ভাষায়, ‘গেটে কেউ থামায়নি, তাই সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়েছিলাম। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। এক শোবার ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কেউ কিছু বলল না, তাই ভাবলাম হয়তো ঠিকই করছি।’
ধর্মেন্দ্রর উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় দিলীপ কুমারের। তিনি উঠে বসে অবাক হয়ে তাকান এক অচেনা তরুণের দিকে। ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘তিনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন বিস্ময়ে। আমি ভয় পেয়ে যাই। তিনি জোরে একজন ভৃত্যকে ডাকলেন। আতঙ্কে আমি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।’
এই ঘটনার ছয় বছর পর ভাগ্য ঘুরে যায় ধর্মেন্দ্রর। তখন তিনি নিজেও চলচ্চিত্র জগতের একজন পরিচিত মুখ। এক অনুষ্ঠানে দিলীপ কুমারের বোনকে দেখে তিনি ছুটে যান তার কাছে। তাকে অনুরোধ করে বলেন, ‘দয়া করে আমাকে দিলীপ সাহেবের সঙ্গে একবার দেখা করিয়ে দিন। আমি তাকে ভাইয়ের মতোই ভালোবাসি।’
শেষ পর্যন্ত দিলীপ কুমারের সঙ্গে তার দেখা হয়। সেই সাক্ষাৎ ছিল এক অনন্য মুহূর্ত। দিলীপ কুমার তাকে আন্তরিকভাবে বরণ করে নিয়েছিলেন। সেই সময়টা ছিলেন শীতকাল। ঠান্ডায় কাঁপছিলেন ধর্মেন্দ্র। এটা দেখে নিজের একটি সোয়েটার উপহার দেন তিনি। ধর্মেন্দ্র লিখেছেন, ‘তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, আর গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বিদায় জানালেন। সেই আলিঙ্গনের উষ্ণতা আজও ভুলতে পারিনি, কারণ সেটি ছিল নিখাদ ভালোবাসা।’
দিলীপ কুমারের স্ত্রী সায়রা বানুও জানিয়েছেন ধর্মেন্দ্র কতোটা ভালোবাসতেন তার প্রিয় নায়ককে। সায়রা জানান, আজও ধর্মেন্দ্রর বাড়িতে দিলীপ কুমারের একটি বিশাল ও চমৎকার ছবি টাঙানো আছে। ধর্মেন্দ্র মজা করে তাকে প্রায়ই বলেন, ‘দিলীপ সাহেবকে ভালোবাসায় তোমার সঙ্গে আমার প্রতিযোগিতা চলছে। এটা চলবে সবসময়।’
দিলীপ কুমার ও ধর্মেন্দ্র; এই দুই কিংবদন্তি কেবল একবারই একসঙ্গে পর্দায় অভিনয় করেছিলেন। সেই ছবির নাম ‘পারি’। তবে প্রিয় নায়কের প্রতি ধর্মেন্দ্রের পাগলামি, উন্মাদনার এই গল্প বলিউডের দুই প্রজন্মের নায়কদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক অনন্য দলিল হয়ে থাকবে চিরকাল।
এলআইএ/এএসএম

2 hours ago
6









English (US) ·