তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার গভীর রাতে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এখন পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস।
রোববার (২৬ অক্টোবর) রাতভর সংঘর্ষের ঘটনার প্রেক্ষিতে ২৮ অক্টোবর থেকে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সিটি ইউনিভার্সিটির সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার পর হল ছেড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মীর আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা। সোমবার দুপুরে ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সিটি ইউনিভার্সিটির পাশে থেকে তারা ক্ষতিপূরণে সহযোগিতা করবে।
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেছেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে খুবই সামান্য বিষয় থেকে। থুথু ফেলাকে কেন্দ্র করে। যেটি জানতে পেরেছি, ড্যাফোডিলের একজন শিক্ষার্থীর গায়ে থুথু লেগেছে। বিষয়টি নিয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির সেই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে, তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এবং সেখানেই সেটি শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাচেলর প্যারাডাইজ নামে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ হয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সেখানে আক্রমণ করেছে এবং এটি সবাই জানে। এটিই মূলত সূত্রপাতের জায়গা।
আরও পড়ুন-
সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটক ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর
ড্যাফোডিল-সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ
সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস যেন ধ্বংসস্তূপ, পরিবেশ থমথমে
তিনি বলেন, এখান থেকেই মূলত সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের প্রতি ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের একটা উষ্মা জন্মেছে। সিটি ইউনিভার্সিটি যেহেতু রাস্তার ওপর, সেখানে একটা মবের আকার ধারণ করেছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ওখানকার লোকজন যারা জড়িত ছিল, সেটি বের করাও একটি কঠিন কাজ। কারা দায়ী সেগুলো বের করা এবং এক্ষেত্রে সময় লাগবে এবং সিটি ইউনিভার্সিটির কোঅপারেশন লাগবে। তারা যদি আমাদের ফুটেজ দেয়, আমরা শনাক্ত করতে পারি কোন শিক্ষার্থীরা কী করলো, কারা করলো আমরা বুঝতে পারবো।
এদিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের হামলায় অন্তত ২০-২৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান।

সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সিটি ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, রোববার রাতে থুথু ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির দুজন শিক্ষার্থীর মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। বিষয়টি রাত ১০টার দিকে সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু রাত ১০টার পর থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত ড্যাফোডিলের অসংখ্য দুষ্কৃতকারী শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা চালায়। তারা ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটক ভাঙচুর করে। সীমানা প্রাচীর ভাঙচুর করেছে। এছাড়া ১৩টির মতো গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, হামলাকারী শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের অফিস রুমে প্রবেশ করে ভিসি, প্রোভিসি, রেজিস্ট্রারেরসহ অফিসের সকল কম্পিউটার ভাঙচুর করে। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র লুট করেছে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ক্যাম্পাসে এসে হতভম্ব হয়ে যাই। শিক্ষার্থীদের দ্বারা এমন কাজ কীভাবে সম্ভব। এরপর ড্যাফোডিলের উপাচার্যকে বিষয়টি জানিয়ে একজন প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ করা হয়।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। হামলায় আমাদের ২৫-২৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীসুলভ আচরণ করেনি। ২০-২৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ইউজিসি থেকে প্রতিনিধি দল আসছে বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য।
তুচ্ছ ঘটনায় শুরু সংঘর্ষ
রোববার সন্ধ্যার পর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলের’ পাশে বসে ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী থুথু ফেললে অসর্তকতাবশত সেখান দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া করা ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তারা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরই মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় পৃথক একটি স্থানে সেখানকার শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢোকেন।
এসময় ক্যাম্পাসে পার্ক করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি বাস, দুইটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। একটি বাস, দুইটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবন ভাঙচুর করা হয়। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি এলাকা ত্যাগ করে। এসময় উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ওই এলাকায় ছিলেন।
আটক শিক্ষার্থী হস্তান্তর
ঘটনার পর রাতেই সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে কিছু ড্যাফোডিল শিক্ষার্থী আটকা পড়েন। সোমবার দুপুরে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ জানান, এরইমধ্যে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের প্রশাসনের কিছু লোকজন এসেছিলেন, তাদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এফএ/জেআইএম

1 week ago
12








English (US) ·