ঢাকা দক্ষিণ সিটির আবাসিক এলাকা অধ্যুষিত খিলগাঁও-সবুজবাগ থানার কয়েকটি ওয়ার্ড-ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ আসন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সরগরম সংসদীয় এলাকাজুড়ে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট থেকে সৃষ্ট দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম থাকেন খিলগাঁও। জামায়াতের প্রার্থী কবির আহমদও স্থানীয় বাসিন্দা। আবার বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
জামায়াতের প্রার্থী আগে থেকেই চূড়ান্ত। বিএনপি-এনসিপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস ও নাহিদ ইসলাম যদি এ আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানাধীন নাসিরাবাদ ইউনিয়ন, দক্ষিণগাঁও ইউনিয়ন, মান্ডা সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ০১, ০২, ০৩, ০৪, ০৫, ০৬, ০৭, ৭১,৭২,৭৩,৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।

সরেজমিনে এ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কবির আহমদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছেয়ে গেছে। তারা সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ করছেন নিয়মিত। বিশেষ করে তালতলা মার্কেট, গোড়ান, খিলগাঁও রেলগেট, মুগদা মেডিকেল এলাকা ও মান্ডায় এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর ব্যানার-পোস্টার বেশি।
এনসিপির প্রার্থী হিসেবে নাহিদ হোসেনকে নিয়ে আলোচনা
তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তার কথা দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। এলাকা ঘুরে তার ফেস্টুন-পোস্টারও দেখা গেছে। তবে সেগুলো নির্বাচনি পোস্টার না, সদস্য সংগ্রহ কিংবা সমাবেশের। অন্য এলাকায় নাহিদের এমন প্রচারণা চোখে না পড়লেও এ আসনের এলাকাগুলোতে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে তিনি প্রার্থী হতে পারেন।
আরও পড়ুন
ঢাকা-২ আসন/বিএনপিতে পিতা-পুত্র, জামায়াত-এনসিপিতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী
ঢাকা-৫ আসন/বিএনপিতে সালাহউদ্দিন-নবী-নয়ন, জুলাই স্পিরিট নিয়ে মাঠে জামায়াত
ঢাকা-৭ আসন/বিএনপির মনোনয়ন চান হাফ ডজন নেতা, নির্ভার জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
তবে দলটির আরেকজনও আছেন আলোচনায়। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. তাসনিম জারার নামও শোনা যাচ্ছে। যদিও তার কোনো প্রচারণা চোখে পড়েনি। জারা ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থী হবেন বলেও প্রচারণা আছে। এনসিপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আসনের জন্য প্রার্থীও ঘোষণা করেনি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির একজন সমন্বয়ক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই আসনটিতে আমাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভাই প্রার্থী হতে পারেন। যেহেতু তার বাসা খিলগাঁও এলাকায়। তবে কে কোথায় নির্বাচন করবেন সেটা অফিসিয়ালি আরও পরে জানানো হবে।’
এ আসনে প্রার্থী কম দেখছি। জামায়াতের কবির আহমেদ আর বিএনপির আফরোজা আব্বাস ছাড়া কারও পোস্টার দেখি না। জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রতি সপ্তাহে জনসংযোগ করেন।–খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন
মির্জা আব্বাসের প্রভাবে এগিয়ে আফরোজা আব্বাস
এ আসনে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দলের হেভিওয়েট নেতা মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। ইতোমধ্যে খিলগাঁও ও মুগদা এলাকাসহ ঢাকা-৯ এর বিভিন্ন জায়গায় তার পোস্টারও দেখা যাচ্ছে। যদিও ঢাকা-৮ আসনেও তিনি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। বিএনপির ‘এক পরিবার এক প্রার্থী’ নীতি মানলে আফরোজা আব্বাস মনোনয়ন পাবেন কি না তা বলা মুশকিল। যদিও মহিলা দল নেত্রী হিসেবে আফরোজা আব্বাসেরও নিজস্ব পরিচিতি আছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যখন এ আসনের অনেক এলাকা ঢাকা-৮ এর মধ্যে ছিল তখন মির্জা আব্বাস প্রার্থী ছিলেন। এর আগে এ আসনে আফরোজা আব্বাস কখনো নির্বাচন করেননি। এবার তিনি প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। প্রচারণাও চালাচ্ছেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সূত্রে জানা যায়, জাতীয় রাজনীতিতে এই দুজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে ঢাকা-৯ এর নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আফরোজা আব্বাস। এ আসনে আলোচনায় আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলও।
মুগদা কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী ফকির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আফরোজা আব্বাসকে গত সাত-আট মাস ধরে অনেক দেখেছি। তবে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না। তিনি রংপুরে নির্বাচন না করলে এ আসন থেকেও নির্বাচন করতে পারেন। এটা বিএনপির স্থানীয় নেতাদের মুখে শুনেছি।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির ভেতরে গুঞ্জন রয়েছে একই পরিবারের দুজন সদস্যকে সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে এ আসনে বিএনপি আফরোজা আব্বাসকে নমিনেশন না-ও দিতে পারে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন পেতে পারেন।

ঢাকা-৯ আসনে ব্যানার-পোস্টার প্রতিযোগিতায় অনুপস্থিত থাকলেও নেতাকর্মীদের মুখে মুখে হাবিব উন নবী খান সোহেলের নাম শোনা যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, এ আসনে সোহেল সাহেব প্রার্থী হতে পারেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে এলাকার ভোটার হওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তাই যে কোনো যোগ্য প্রার্থী কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন।’
এ বিষয়ে জানতে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা দিলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রচারণা-সভা-সমাবেশে এগিয়ে জামায়াত প্রার্থী কবির আহমদ
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিটি থানায় নির্বাচনি অফিস খুলেছে জামায়াত। এছাড়া সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস পরিদর্শন, হাটবাজার, মার্কেট ও মসজিদকেন্দ্রিক জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন জামায়াত প্রার্থী। করছেন সভা-সমাবেশ।
আমি গত ২৫ বছর এ এলাকায় কাজ করি। অনেকগুলো স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা নির্মাণে আমি সংযুক্ত। নির্বাচন কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে নাগরিক কমিটি গঠন করেছি, মহল্লাভিত্তিক সংগঠিত হয়েছি। আমাদের সাংগঠনিক শক্তি ঢাকার অন্য আসনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী।–জামায়াতের প্রার্থী কবির আহমদ
খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন আলমগীর হোসেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘এ আসনে প্রার্থী কম দেখছি। জামায়াতের কবির আহমদ আর বিএনপির আফরোজা আব্বাস ছাড়া কারও পোস্টার দেখি না। জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রতি সপ্তাহে জনসংযোগ করেন।’

খিলগাঁও ঝিলপাড় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপি তো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এখনো বলা যাচ্ছে না কে প্রার্থী হবেন। তবে মানুষের ভোটে যেই আসুক আমরা চাই এলাকার উন্নয়ন আর শান্তি।’
তিনি বলেন, ‘বাসাবো, মান্ডা এলাকায় কিশোর গ্যাং আছে, মাদকের বেচাকেনাও চলছে হরদম। আমরা এসব চাই না। ঢাকা-৯ মাদকমুক্ত হোক। এলাকায় খুন-রাহাজানি আর মানুষদের হয়রানিতে যারা জড়িত থাকবে, আমাদের ভোট তাদের বিপক্ষে যাবে।’
জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী সংগঠনটির কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য কবির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি জামায়াতের খিলগাঁও-মুগদা অঞ্চলের পরিচালক ছিলাম ১০ বছর। ১৯৯৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় জামায়াতের মজলিশে শুরা সদস্য। এখানেই আমার বাড়িঘর। এবার অন্য দলে যারা প্রার্থী হবেন, শোনা যাচ্ছে তাদের কেউ এখানকার বাসিন্দা না। সে হিসেবে জনগণের সঙ্গে অনেক আগে থেকে আমি সম্পৃক্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গত ২৫ বছর এ এলাকায় কাজ করি। অনেকগুলো স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা নির্মাণে সংযুক্ত। নির্বাচন কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে নাগরিক কমিটি গঠন করেছি, মহল্লাভিত্তিক সংগঠিত হয়েছি। আমাদের সাংগঠনিক শক্তি ঢাকার অন্য আসনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের বেশ কিছু সংখ্যক বাড়িওয়ালা জনশক্তি আছেন এ আসনে। যারা কাজ করে যাচ্ছেন মানুষের জন্য।’
২০০৮ সালে সীমানা পরিবর্তনের পর সবশেষ চারটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী। এর আগে আসনটি ঢাকা-৮ এর সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমাদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে সংসদ সদস্য হন।
সবশেষ হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪৯ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৫ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৩ জন। হিজড়া ভোটার চারজন।
আরএ/এএসএ/এমএফএ/এমএস

1 week ago
6









English (US) ·