কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিএনপি নেতাদের দখলে থাকা একটি জলমহাল উন্মুক্ত করে নিয়েছেন জেলেরা। রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের হুমাইপুর এলাকায় ধলেষরী নদীর ওই জলমহালটি শতাধিক নৌকা নিয়ে মিছিল করে জেলেরা দখলমুক্ত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল নদীর এই জলমহাল। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, চাঁদা ছাড়া তারা নদীতে মাছ ধরতে পারতেন না। মাছ ধরতে গেলে হুমকি ও জাল কেড়ে নেওয়া হয়। কিছুদিন আগে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরের নেতৃত্বে মাইজচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিল্লুর রহমান ও হুমাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাশিদ মিয়াসহ লোকজন নিয়ে মহড়া দিয়ে এই জলমহাল দখল করে। এতে জীবিকা নির্বাহে চরম সংকটে পড়ে স্থানীয় জেলে ও এলাকাবাসী।
রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে জেলেরা নৌকা নিয়ে নদীতে জড়ো হতে থাকেন। দুপুরের দিকে তারা একসঙ্গে নদীতে নামেন ও ‘উন্মুক্ত, উন্মুক্ত’ স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় নদীপাড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।
জেলে নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, বছরের পর বছর আমাদের নদী কিছু লোক দখল করে রেখেছিল। আজ আমরা নিজের নদী নিজেরাই ফেরত নিয়েছি, এটা আমাদের জীবনের বড় আনন্দ।

জেলে উর্মিত দাস বলেন, জলমহাল জেলেদের জীবিকার উৎস। কেউ দলের নামে এটা দখল করে রাখবে, সেটা অন্যায়। আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের জবাব দিয়েছি।
জেলে পলাশ দাস বলেন, আগে নদীতে নামতে হলে চাঁদা দিতে হতো। আজ আমরা ভয় ছাড়া মাছ ধরতে পারছি, এই স্বাধীনতাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
জেলে আনন্দ বাবু বলেন, নদী আমাদের জীবনের অংশ। আজ আমাদের সন্তানদের মুখে হাসি ফিরেছে। এটা যেন স্থায়ী হয়, সেই দাবিই আমাদের।
জেলে ওহেদ মিয়া বলেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরের নেতৃত্বে মাইজচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিল্লুর রহমান ও হুমাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাশিদ মিয়ার নেতৃত্বে লোকজন নিয়ে এই জলমহাল দখল করে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যেন আর কেউ এই জলমহাল দখল না করতে পারে।
জেলে দুলাল মিয়া বলেন, আমরা রাজনীতি করি না। শুধু পেটের দায়ে মাছ ধরি। এখন অন্তত বাধা ছাড়া কাজ করতে পারব, এইটুকুই আমাদের চাওয়া।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জেলেদের দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ও যেন পুনরায় দখল না হয় সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে।
বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাহিদ ইসলাম বলেন, জলমহালটি নিয়ে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা (স্টে অর্ডার) রয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করবো হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে চলতে।
এসকে রাসেল/এমএন/জিকেএস

2 weeks ago
10









English (US) ·