সংস্কার ও গণভোট নিয়ে বিএনপির অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘বিএনপি ১০০ বছরেও গণভোট ঠেকাতে পারবে না।’
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের(এনএইচএ) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এতে এনসিপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, ড্যাব, এনডিএফ ও নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনসহ স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ১৪২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন এনসিপির সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, গণভোট বাংলাদেশে হবে। বিএনপি ১০০ বছর চেষ্টা করেও গণভোট ঠেকাতে পারবে না। গণভোট বাংলাদেশের একটি বড় অংশ চায়, যাদের তুলনায় বিএনপির নেতাকর্মী একদমই সামান্য। এত লোকের সামনে আপনি কী নিয়ে দাঁড়াবেন। লাঠি-বাঁশ বা অস্ত্র নিয়ে দাঁড়াবেন? এটা তো আওয়ামী লীগও করেছিল। পেরেছিল তারা? অতীতে ইতিহাস থেকে কেউ যদি শিক্ষা না নেয়, তাদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব তো এনসিপি নেবে না।
‘আওয়ামী লীগের সব মামলা তুলে নেওয়া হবে’ গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে দেওয়া বিএনপি মহাসচিবের বক্তবের সমালোচনা করে এনসিপি এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নাকি মামলা তুলে নেওয়া হবে। মামলা তো তুলেই নিয়েছেন গত এক বছর টাকার বিনিময়ে। নতুন করে আর কী তুলবেন। এরা গত এক বছরে যে মামলা বাণিজ্য করেছে, সেগুলোর স্বীকৃতি মির্জা ফখরুল দিলেন। তাদের জায়েজ করে দিলেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে সকলকে প্রথমে বললেন, তার বিরুদ্ধে তার এলাকায় মামলা দেবো। বললো, ভাই কিছু টাকা দিয়ে দেই, মামলা দিয়েন না। ঠিক আছে দাও, আগামী নির্বাচনটা ভালোভাবে করতে পারবো। তারপর আবার তারে মামলা দিলো, এজহারের সময় আরও কিছু টাকা নিয়ে নির্বাচন ফান্ড বাড়াইলো। তারপর থানায় নিলো, সেখানে বিএনপিপন্থি আইনজীবীও ভাগ বসালো। বললো, আরে ভাই আমি আইনজীবী, আমাকেও তো ভোট করতে হবে। আমার ফান্ড কই? আওয়ামী লীগ তাকেও টাকা দিলো।
তিনি আরও বলেন, গত এক বছরে চাঁদাবাজি আর মামলা বাণিজ্যের ইনকাম ছাড়া বিএনপির ইতিহাসে আর কোনো লেখা নাই। বিএনপির গত এক বছরে দুই সফলতা; চাঁদাবাজি আর মামলাবাজি। এছাড়া আর সফলতা নাই। এই দুইটা নিয়ে তারা জনগণের সামনে ভোট চাইবে? ভোট না, তাদের জুতা দেবে।
পাটওয়ারী বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সকল দল ঐক্যবদ্ধ না হলে, বাংলাদেশের ভবিষ্যতে দুর্গতি রয়েছে।
‘লকডাউন ঠেকাতে হাসনাত আবদুল্লাহ যথেষ্ট’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, কাল নাকি লকডাউন! কাল সকল দল মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগকে মাঠে ঠেকানোর জন্য আমাদের এক হাসনাত আবদুল্লাহ-ই যথেষ্ট। আওয়ামী লীগের মরণ হয়ে গেছে। এখন যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, এতে দেশাবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসনাত আবদুল্লাহ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সময় তো কত রাজনৈতিক দল ছিল, আমরা তো কাউকে দেখি নাই।
‘স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনায় মানুষের বড় অংশ মারা যাবে’
স্বাস্থ্যখাতের নেতাতিবাচক চিত্র তুলে ধরে নাসীর পাটোয়ারী বলেন, ঢাকা মেডিকেলের সামনে গিয়ে যে বেহাল দশা পাবেন, এটা পুরো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের চিত্র। জুনিয়র চিকিৎকদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই। সারাদিনরাত সার্ভিস দেয় যে চিকিৎসক, তার খাওয়ার, ঘুমানোর ব্যবস্থা নেই। নার্সরাও তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতের নৈরাজ্য থামাতে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য প্ল্যান মানুষকে দেন। একটা স্বাস্থ্য কাঠামো যদি আমরা তৈরি না করতে পারি, তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে দলদাস রয়েছে, তারা পদ-পদবি নিয়ে আর টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে মরামারি করবে। আর এই মারামারি চলমান থাকলে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনায় মানুষের বড় অংশ মারা যাবে।
এনসিপি নেতা বলেন, আমরা বলবো, শুধু চিকিৎসক নয়, সকল স্বাস্থ্যকর্মীর ঘুম খাওয়া ও কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো দলীয় গুণ্ডা নয়, বিশেষজ্ঞদের তাদের নিয়োগ দিয়ে তাদের নীতিনির্ধারণের পক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নিয়ে আসতে হবে।
‘বামরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে নিশানা থাকবে না’
এসময় বামদের উদ্দেশ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাম বন্ধুরা স্বপ্নের লাল টুকটুকে পতাকা, একটা সিটের বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাদের বলবো, কার্ল মার্কসের সঙ্গে গাদ্দারি কইরেন না। সারাদিন তো মার্কস পড়েন, কী পড়েন আল্লাহ জানে। অন্তত এই সময়ে জনগণের সঙ্গে গাদ্দারি কইরেন না। দু-একটা সিটের বিনিময়ে লাল রক্তের পতাকা বিক্রি করে দিয়েন না। যদি এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ভবিষ্যতে আপনাদের লাল নিশানা থাকবে। না হয়, থাকবে না।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহমুদা মিতু, জাতীয় যুবশক্তির সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদ রায়হান, বিসিএস ডক্টরস ফোরামের সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, নবগঠিত কমিটির সদস্যসচিব ডা. আব্দুল আহাদ, মুখ্য সংগঠক ডা. ইউসুফ জামিল তিহান ও মুখ্য সমন্বয়ক ডা. হুমায়ুন কবির হিমু।
এসইউজে/বিএ/জেআইএম

5 hours ago
6









English (US) ·