ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৬ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাকি ৬৪ আসনে কারও নাম না থাকায় রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা, এই আসনগুলো কি জোটের শরীক ও যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের জন্য খালি রাখা হয়েছে, নাকি দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা যায়নি?
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সব আসন জোটের জন্য নয়। অনেক আসনে দলের একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। একই সঙ্গে শরীকদের সর্বোচ্চ মূল্যায়নের আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ৬৩টি আসনের সবই জোটের জন্য খালি রাখা হয়নি। কিছু আসনে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। শিগগির এসব আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে যারা যুগপৎ আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তাদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হবে।
অন্যদিকে, স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় ৪০টা আসন শরীকদের বিবেচনায় আছে। কিছু আসনে বিএনপি ও জোট, দু’দলেরই প্রার্থী থাকায় আলোচনা চলছে। ঢাকায় আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করবো, তিনি যদি একটি আসনে প্রার্থী হন, তা নির্বাচনি ফ্লো তৈরি করবে।
শরীকদের দাবি-দাওয়া: ২২২ আসনের তালিকা
বিএনপি শরীকদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল, কে কোন আসনে নির্বাচন করতে চান। এর জবাবে শরীকরা ২২২টি আসনে প্রার্থী দাবি করে তালিকা জমা দিয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদ আরও ২০টি আসন দাবি করেছিল, যদিও তারা আনুষ্ঠানিক তালিকা দেয়নি।
বিএনপি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০টি আসনই শরীকদের জন্য ছাড়া হতে পারে।
যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা
সূত্র জানায়, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের নেতাদের মধ্য থেকে অন্তত ১২ জনকে নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
তারা হলেন,
পিরোজপুর–১: মোস্তফা জামাল হায়দার (জাতীয় পার্টি–জাফর)
বগুড়া–২: মাহমুদুর রহমান মান্না (নাগরিক ঐক্য)
ঢাকা–১৭: আন্দালিব রহমান পার্থ (বিজেপি)
লক্ষ্মীপুর–১: শাহাদাত হোসেন সেলিম (এলডিপি)
কিশোরগঞ্জ–৫: সৈয়দ এহসানুল হুদা (বাংলাদেশ জাতীয় দল)
ঢাকা–১৩: ববি হাজ্জাজ (এনডিএম)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৬: জোনায়েদ সাকি (গণসংহতি আন্দোলন)
চট্টগ্রাম–১৪: অধ্যাপক ওমর ফারুক (এলডিপি)
কুমিল্লা–৭: ড. রেদোয়ান আহমেদ (এলডিপি)
নড়াইল–২: ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (এনপিপি)
পটুয়াখালী–৩: নুরুল হক নুর (গণঅধিকার পরিষদ)
ঝিনাইদহ–২: রাশেদ খান (গণঅধিকার পরিষদ)
নতুন খেলোয়াড় এনসিপি
নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি (ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি)-র সঙ্গে যদি জোট চূড়ান্ত হয়, অন্তত ৮–১০টি আসন তাদের জন্য বরাদ্দ হতে পারে।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন,
ঢাকা–১১: নাহিদ ইসলাম
রংপুর–৪: আখতার হোসেন
পঞ্চগড়–১: সারজিস আলম
কুমিল্লা–৪: হাসনাত আবদুল্লাহ
ঢাকা–১৮: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
ঢাকা–৯: তাসনিম জারা
নরসিংদী–২: সারোয়ার তুষার
নোয়াখালী–৬: হান্নান মাসউদ
ঢাকা–১৪: আদিবুল ইসলাম আদীব
অতীতের আসন বণ্টনের ইতিহাস
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর জন্য ৩৯টি আসন ছেড়েছিল। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি ও ২০-দলীয় জোটকে ৩৯টি আসন ছাড়া হয়েছিল, যার মধ্যে ২২টি ছিল জামায়াতের জন্য।
এবার আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত থাকায় বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে মাঠে থাকতে পারে জামায়াত ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দল।
শরিকদের প্রতিক্রিয়া
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি মনে করেছিল নির্বাচনটা সহজ হবে, তাই তারা অনেকটা এককভাবে প্রার্থী দিয়েছে। এখনও কিছু পরিবর্তনের সুযোগ আছে বলে তারা জানিয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা মনে করি, বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট নাও হতে পারে, তবে আসন সমঝোতা হবে। যেহেতু বিএনপি আমাদের আন্দোলনের প্রধান শরিক, তাই তারা আমাদের অগ্রাধিকার পাবে।
কেএইচ/এসএনআর/জেআইএম

14 hours ago
5









English (US) ·