প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পার হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) এখনো ‘সেকশন-২’ থেকে ‘সেকশন-১’-এ উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ফলে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, অস্ট্রিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগ্যতা মূল্যায়ন নীতিমালায় কুবিকে ‘সেকশন-২’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন যোগ্যতা মূল্যায়ন নীতিমালা প্রকাশিত হওয়ার পর এই তথ্য সামনে এসেছে। জানা যায়, দেশীয় ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘সেকশন-১’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
দেশের বাকি সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ব্যাচেলর ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেকশন-২’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিদেশে মাস্টার্সে আবেদন করতে গেলে কুবির ব্যাচেলর ডিগ্রিকে খাটো করে দেখা হচ্ছে। তাদের সরাসরি মাস্টার্সে ভর্তি না করে প্রি-মাস্টার্স কোর্সে পাঠানো হচ্ছে, যা সময় ও খরচ উভয়ই বাড়াচ্ছে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আরিয়ান বলেন, ‘বিদেশে মাস্টার্সে আবেদন করতে গিয়ে দেখি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক জায়গায় Section-2 হিসেবে দেখানো হয়। ফলে সরাসরি মাস্টার্সে না নিয়ে প্রি-মাস্টার্সে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও খরচ উভয়ই বাড়াচ্ছে। এটা সত্যিই হতাশার।’
আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরমানুল হক জানান, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেনি। বিদেশে আবেদন করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি সেকশন-ওয়ান লিস্টে না থাকায় শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ফি দিতে হয়। সেকশন-১-এ থাকলে খরচ অনেক কম হতো। ওয়েবসাইট, গবেষণা প্রকাশনা ও শিক্ষক প্রোফাইলের পুরোনো অবস্থাই মূল সমস্যা।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শবনম মনির প্রিমা বলেন, ‘একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার পরও অস্ট্রিয়ার মতো বাজেট ফ্রেন্ডলি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে না পারাটা চরম ব্যথার। বাজেট, টিউশন ফি ও পড়াশোনার জন্য এটা একটা চমৎকার সুযোগ আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য। যেই সুযোগটা আমরা হারাচ্ছি শুধু সেকশন ক্যাটাগরির কারণে। এটা খুবই হতাশাজনক।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২ গ্রেড পাওয়া দুঃখজনক। আন্তর্জাতিক র্যাংক নির্ধারণে একাডেমিক পরিবেশ, গবেষণা, প্রকাশনা, লাইব্রেরি ও প্রযুক্তিগত সুবিধা সব বিবেচনা করা হয়। আমি যোগদানের পর থেকেই এসব ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছি। আগে মাত্র ১০-১৫ শিক্ষকের প্রোফাইল ছিল। এখন প্রায় ২০০-এর বেশি। শিক্ষকরা গবেষণা ও প্রকাশনা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় প্রোফাইলে দেখাবেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান থাকবে। এতে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে সুবিধা হবে।’
তিনি বলেন, ‘পূর্বে শিক্ষার্থীদের কাজের কোনো ডকুমেন্টেশন ছিল না। নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে একটি সফটওয়্যার ক্রয় করেছি। এখন থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি কাজ সেখানে আপলোড হবে। শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে গিয়ে সহজে পিডিএফ ফাইল জমা দিতে পারবেন। সব তথ্য দৃশ্যমান থাকলে র্যাংকিং বা গ্রেডের উন্নতি হবে। আশা করি শিগগির আমরা সেকশন-১-এ উন্নতি হতে পারব।’

14 hours ago
8









English (US) ·