বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের মামলা করার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ, বিবিসি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা চলাকালে ট্রাম্পের এক ভাষণের ‘ভুলভাবে সম্পাদিত’ অংশ প্রচার করেছে, যা প্রতিষ্ঠানটি পরে স্বীকারও করেছে। এরপরও বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের (প্রায় ৭৬ কোটি পাউন্ড) মানহানি মামলার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
এখন প্রশ্ন হলো- ট্রাম্প কি সত্যিই বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের মামলা করতে পারেন? আর মামলা হলেও তাতে জিতবে কে? এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ট্রাম্প কোথায় মামলা করবেন?
বিবিসির বিতর্কিত ‘প্যানোরামা’ পর্বটি প্রচারিত হয়েছিল গত বছরের ২৮ অক্টোবর। ফলে লন্ডনে মানহানির মামলা করার এক বছরের সীমা পার হয়ে গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এই সীমা দুই বছর, তাই সেখানে ট্রাম্পের মামলা করার সুযোগ এখনও আছে। তাছাড়া বিবিসির কনটেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি ডটকম এবং বিবিসি সিলেক্ট স্ট্রিমিং সার্ভিসের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন>>
বিবিসিকে ‘ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ বললেন ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি
বিবিসির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
ট্রাম্প ইস্যু/ পদত্যাগ করলেন বিবিসির মহাপরিচালক ও বার্তা প্রধান
ট্রাম্পের আইনজীবীর পাঠানো এক চিঠিতে বিবিসিকে সতর্ক করা হয়েছে, যদি ‘ডকুমেন্টারিটি পুরোপুরি প্রত্যাহার, প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান’ না করা হয়, তাহলে ফ্লোরিডায় মামলা করা হবে।
সত্যিই ১০০ কোটি ডলারের মামলা করবেন ট্রাম্প?
যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত কোনো আদালত সর্বোচ্চ দণ্ড হিসেবে প্রায় ১৫ লাখ পাউন্ড ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় মানহানির রায় দেওয়া হয়েছিল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারক ও ‘ইনফোওয়ার্স’ প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্স জোনসের বিরুদ্ধে। তাকে ২০১২ সালের স্যান্ডি হুক স্কুলে হামলায় নিহত শিশুদের পরিবারের কাছে ১৪০ কোটি ডলার দিতে বলা হয়েছিল।
তবে এটি ছিল ব্যতিক্রম। এর পরেই রয়েছে ফক্স নিউজের ৭৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের সমঝোতা—যা তারা ভোটিং মেশিন কোম্পানি ‘ডমিনিয়ন’-এর সঙ্গে করেছিল ২০২০ সালের নির্বাচন চুরি সংক্রান্ত মিথ্যা প্রচারের অভিযোগে।
ট্রাম্প কীভাবে ১০০ কোটি ডলারের অংকে পৌঁছেছেন, তা স্পষ্ট করেননি। তবে এর আগেও তিনি একাধিকবার বিশাল অংকের মামলার হুমকি দিয়েছেন—যেমন সিবিএস নিউজের বিরুদ্ধে এক থেকে দুই হাজার কোটি ডলার, নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি ডলার।
মামলা হলে জিতবে কে?
যুক্তরাষ্ট্রে মানহানির মামলায় জনপরিচিত ব্যক্তিদের প্রমাণের মান সাধারণ নাগরিকদের তুলনায় অনেক কঠিন। তাদের দেখাতে হয় যে, অভিযুক্ত পক্ষ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে মিথ্যা প্রচার করেছে।’ ট্রাম্পের আইনজীবী তার চিঠিতে এ কথাও উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্যেও বাদীকে প্রমাণ করতে হয়, মানহানির কারণে তার সুনাম বা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ট্রাম্পের পক্ষ দাবি করছে, তিনি ‘খ্যাতি ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছেন।
তবে আদালতে গেলে বিবিসি সম্ভবত যুক্তি দেখাবে, ডকুমেন্টারিটি ছিল সাংবাদিকতামূলক বিশ্লেষণ, যেখানে ট্রাম্পপন্থিদের বক্তব্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাছাড়া, ট্রাম্পের মতো বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে ‘সুনামের ক্ষতি’ প্রমাণ করা কঠিন। কারণ তার সম্পর্কে জনমত আগে থেকেই স্থির।
তাছাড়া ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগেই বহুবার বিতর্ক হয়েছে। ২০২১ সালের অভিশংসন বিচারে সিনেটে তিনি ‘বিদ্রোহ উসকে দেওয়া’ অভিযোগ থেকে খালাস পান।
মিডিয়া ল’ রিসোর্স সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক জর্জ ফ্রিম্যান বিবিসিকে বলেন, এই ১০০ কোটি ডলারের অংকটি সম্পূর্ণ অর্থহীন।
তার মতে, ট্রাম্পের ব্যর্থ মানহানির মামলার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তার এসব আইনি হুমকির বেশিরভাগই আদালতে যায় না, বরং সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখাতেই দেওয়া হয়।
বিবিসির প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
বিবিসি জানিয়েছে, তারা ‘যথাসময়ে’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে আংশিকভাবে ক্ষমা ও সংশোধনী দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, তারা কি আদালতের বাইরে সমঝোতায় যাবে?
এর আগে সিবিএস নিউজের মূল প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে সমঝোতা করেছিল, যা অনেকেই ‘বৈধতার চেয়ে ব্যবসায়িক কৌশল’ হিসেবে দেখেছিলেন। একইভাবে এবিসি নিউজ ও সাংবাদিক জর্জ স্টেফানপোলাসও ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে সমঝোতায় যান, যখন ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ‘ধর্ষণের দায়ে দায়ী’ নন, বরং ‘যৌন নির্যাতনের দায়ে’ দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
কেএএ/

5 hours ago
5








English (US) ·