বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব
                    
            
            রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া কী: থ্যালাসেমিয়া একটি মারাত্মক জেনেটিক বা জন্মগত রক্তরোগ। যে সমাজে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিয়ে প্রচলিত, সে সমাজে থ্যালাসেমিয়ার মতো বংশগত রোগ বেশি। বাবা-মা এ রোগের বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাতে পারে। থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের কোনো উপসর্গ নেই। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ ভাগ বা দুই কোটি নারী-পুরুষ নিজের অজান্তে থ্যালাসেমিয়ার বাহক। দেশে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার, দিনে ২০টি শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। কিন্তু জন্মের পরই রোগ ধরা পড়ে না। শিশুর বয়স এক বছরের বেশি হলে বাবা-মা লক্ষ্য করেন সন্তান ফ্যাকাসে ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। তখনই শিশু বিশেষজ্ঞ রক্ত পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া চিহ্নিত করেন।
আক্রান্ত শিশুর কী সমস্যা হয়: থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শরীরে রক্তের মূল্যবান উপাদান হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি হয় না। শিশুর দু-এক বছর বয়সে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, ফ্যাকাশে হয়ে যায়। স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে প্লিহা ও যকৃৎ বড় হয়ে যায় এবং কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। মুখমণ্ডলের হাড়ের অস্থিমজ্জা বিকৃত হওয়ায় শিশুর চেহারা বিশেষ রূপ ধারণ করে।
বাহক জানার উপায়: থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহকদের কোনো লক্ষণ থাকে না। তাদের শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সামান্য কম থাকে। কোনো মানুষের রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়ার বাহক সন্দেহ করা যায়। অধিকতর নিশ্চিত হতে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করা যায়।
স্বামী-স্ত্রী দুজনই বাহক হলে সুস্থ সন্তান পাওয়ার উপায়: স্বামী এবং স্ত্রী দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে, ৫০ ভাগ বাহক হিসেবে এবং ২৫ ভাগ সুস্থ শিশু হিসেবে জন্ম নিতে পারে। তাই বাবা-মা থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে মাতৃজঠরে বাচ্চার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় একমাত্র ভরসা। মায়ের গর্ভে বাচ্চার বয়স ১২ থেকে ১৫ সপ্তাহ হলে প্রাথমিক গর্ভফুল থেকে কোষকলা সংগ্রহ বা গর্ভের শিশুর চারপাশের পানি নিয়ে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করে গর্ভের শিশুর থ্যালাসেমিয়া রোগ আছে কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়।
প্রতিরোধের উপায়: একজন বাহক এবং অন্যজন সুস্থ—এমন দুজনের মধ্যে বিয়ে হলে সন্তানদের সমস্যা হবে না। তাই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর বা বাচ্চা নেওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করতে হবে। সাইপ্রাস ১৯৭৩ সালে, বাহরাইন ১৯৮৫, ইরান ২০০৪, সৌদি আরব ২০০৪ এবং পাকিস্তান ২০১৩ সালে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর বা বাচ্চা নেওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে।
ডা. রেজাউল করিম কাজল
অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়                    
                    
        
        
 5 months ago
                        93
                        5 months ago
                        93
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·