ভাওয়াইয়ার কাঙ্ক্ষিত কাজগুলো শেষ করতে চাই: ভূপতি ভূষণ বর্মা

1 week ago 12

উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে ভূপতি ভূষণ বর্মা পরিচিত নাম। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় জন্ম নেওয়া এই গুণী শিল্পী বহু বছর ধরে ভাওয়াইয়া গানের চর্চা ও প্রচারে নিবেদিত। তার কণ্ঠে ভাওয়াইয়া গান পায় এক অন্যরকম প্রাণ—যেখানে মিশে থাকে উত্তরাঞ্চলের মাটি, মানুষের ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনা আর সহজ-সরল জীবনবোধ। শিল্প ও সংগীতের প্রতি তার গভীর নিষ্ঠা ও অবদানের জন্য স্থানীয়ভাবে তিনি ‘ভাওয়াইয়া ভাস্কর’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ভাওয়াইয়াকে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমি। যেখানে অফলাইন ও অনলাইনে বিনা বেতনে শেখানো হয় লোকসংগীতের অন্যতম ধারা ভাওয়াইয়া। পেয়েছেন দুই বাংলার স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন সম্মাননা পদক। ২৮ অক্টোবর তার ৬৯তম জন্মদিন উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। গুণী এই শিল্পীর মুখোমুখি হয়েছেন কবি ও লেখক জরীফ উদ্দীন

জরীফ উদ্দীন: অনেক শিল্পী লোকগীতির বিভিন্ন শাখায় গান করেন। তবে আপনার ভাওয়াইয়ার প্রতি গুরুত্ব লক্ষ্যণীয়। কেন?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: ভাওয়াইয়া গান লোকসংগীতের একটি অন্যতম ধারা। ভাওয়াইয়া উত্তর অঞ্চলের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না নিয়ে একেবারেই আঞ্চলিক কথায় রচিত। যেন আমার প্রাণের কথা। তাই ভাওয়াইয়া গানের প্রতি আমি আকৃষ্ট। আসলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ গানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তেমন গড়ে ওঠেনি। যেমনটা গড়ে ওঠার কথা ছিল। ভাওয়াইয়া গানের প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণের ব্রত নিয়ে সর্বোপরি নতুন প্রজন্মকে শেখার উদ্দেশ্যে ভাওয়াইয়া একাডেমি গড়ে তুলেছি এবং নিজেও চর্চা করছি।

জরীফ উদ্দীন: কবে থেকে ভাওয়াইয়ার প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল? ভাওয়াইয়া গানের প্রতি আপনাকে প্রথম কে অনুপ্রাণিত করেছিলেন?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত; তখন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করি। ঠিক তখন থেকে ভাওয়াইয়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বাবার উৎসাহ ও প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হই।

জরীফ উদ্দীন: দীর্ঘদিন আপনি ভাওয়াইয়া পরিবেশন করে আসছেন। জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ভাওয়াইয়া পরিবেশনা কোনটি? কেন সেটি স্মরণীয়?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি একসময় আমি দৈনিক করতোয়া পত্রিকার উলিপুর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বগুড়ায় পত্রিকার ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতার অনুরোধে ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিমউদ্দীন রচিত ১০১টি মাছের গানটি একই মঞ্চে দুইবার পরিবেশন করি। সেদিন শ্রোতাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

জরীফ উদ্দীন: ভাওয়াইয়া গানকে আপনি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেন—এটা কি শুধু লোকসংগীত নাকি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ, ভারতের কামতাপুরী, রাজবংশীদের জীবনের দলিল?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: প্রথমেই বলেছি, ভাওয়াইয়া লোকসংগীতের একটি অন্যতম ধারা। এখানের বিশেষত্ব হলো দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর, ভারতের কামতাপুরী, রাজবংশীদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিরহ-বেদনা এককথায় জীবনের দলিল। ভাওয়াইয়া গানের কথাগুলো একেবারেই আঞ্চলিক। ভাওয়াইয়া গান না থাকলে আঞ্চলিক কথাগুলো বিলুপ্ত হতো। আমি মনে করি, ভাওইয়ার আঞ্চলিক কথাগুলো ভাওয়াইয়া গানে ও সুরে বাংলা অভিধানের মতো সংরক্ষিত থাকবে।

জরীফ উদ্দীন: ভাওয়াইয়া গানের কথার ভেতরে যে প্রেম-বিরহের গল্প এবং দুঃখ-বেদনা ভরা সুর আছে—আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা কতটা প্রভাব ফেলে গাওয়ার সময়?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: ভাওয়াইয়া পরিবেশনের আগে গানের বাণী বা কথা বারবার পড়ে উপলব্ধি করতে হবে। সুরের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। গায়কীতে গানের বাণী ও সুর না থাকলে, শ্রোতাদের মন স্পর্শ করতে না পারলে সে গানের অস্থিত্ব থাকবে না। আমি যখন গান গাই আমার ভেতর থেকে চেষ্টা করি ফুটিয়ে তোলার। সত্যি বলতে কি ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

জরীফ উদ্দীন: দীর্ঘজীবনে ভাওয়াইয়া চর্চায় কী ধরনের বাধার মুখোমুখি হয়েছেন?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: আমাদের গ্রামাঞ্চলে লোকগানের শিল্পী ছিল না। বাবার প্রেরণায় ওস্তাদ সুরেন্দ্রনাথ বর্মনের সংগীতে হাতেখড়ি নিই। আমরা চার ভাইয়ের মধ্যে দুজন কণ্ঠশিল্পী, বাকি দুজনের একজন দোতরাবাদক ও অপরজন তবলাবাদক শিল্পী হিসেবে সাধনা শুরু করি। বিদ্যালয়ে অবস্থানের সময়টুকু ব্যতীত গান-বাজনা নিয়ে মেতে থাকতাম। প্রতিবেশীরা ভীষণভাবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। অনেক সময় তারা আমাদের শেয়াল বলে গালি দিতো। বলতো, শেয়ালগুলোর ভোকা-ভোকি করে কানের মাথা খেয়েছে। আমরা তাদের গালিতে কষ্ট পেতাম না। সর্বদা মন-প্রাণ দিয়ে গান চর্চা করতাম। এখন তারাই আমাদের নিয়ে গর্ব করে। যা ভালো লাগে।

 ভূপতি ভূষণ বর্মা

জরীফ উদ্দীন: আধুনিক সংগীতের ভিড়ে লোকগীতি টিকিয়ে রাখতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: আধুনিক সংগীতের ভিড়ে ভাওয়াইয়াকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমে প্রয়োজন সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রজন্মান্তরের উদ্যোগ। লোকগীতিকে শুধু ঐতিহ্য হিসেবে নয়, জীবন্ত সাংস্কৃতিক সম্পদ হিসেবে দেখতে হবে। এজন্য বিদ্যালয় ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানে লোকগীতির পাঠ চালু করা, স্থানীয় শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া এবং গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রচার বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ও সুরের সংমিশ্রণে লোকগীতিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করাও দরকার। তবে মূলধারা ও আঞ্চলিক ভাষার স্বকীয়তা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। লোকবাদ্য দোতারা, বাঁশি, বাংলাঢোল বা তবলা, সারিন্দা বা বেহালা, মন্দিরা ছাড়াও আধুনিক বাদ্যযন্ত্র যেমন- কী বোর্ড, অক্টোপ্যাড ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কী বোর্ড এবং অক্টোপ্যাডের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেন এগুলোর ব্যবহারে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র হারিয়ে না যায়। তবেই লোকগীতি আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে টিকে থাকবে এবং আগামী প্রজন্মের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে। আমি সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভাওয়াইয়া একাডেমি থেকে নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছি।

আরও পড়ুন
হাসান হাফিজ : প্রেম ও মানবিকতার কবি
সৃষ্টিতে বেঁচে থাকবেন সবার মাঝে

জরীফ উদ্দীন: লোকসংগীত চর্চা মানে কি শুধু শিল্পচর্চা, নাকি এটি সংস্কৃতি রক্ষার লড়াইও?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: লোকসংগীত জাতির অস্তিত্ব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসংগীত বা আঞ্চলিক গান ভিন্ন ভিন্ন। লোকসংগীত শুনলে সেই অঞ্চল সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। লোকসংগীত চর্চা শুধু শিল্পচর্চা নয়, এটি এক ধরনের সংস্কৃতি রক্ষার লড়াইও। কারণ লোকগান কোনো ব্যক্তিগত বিনোদন নয় বরং একটি জাতির ইতিহাস, ভাষা, বিশ্বাস, জীবনযাপন ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। যখন আমরা লোকসংগীত চর্চা করি; তখন আসলে আমাদের মাটি, মানুষের স্মৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখি। আধুনিকতার চাপে যখন স্থানীয় সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে; তখন লোকসংগীত চর্চা হয়ে ওঠে সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম—যেখানে প্রতিটি সুর ও কথা আমাদের পরিচয়কে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।

জরীফ উদ্দীন: আধুনিক সমাজে মানুষ যখন নিজের শেকড় থেকে দূরে সরে যাচ্ছে; তখন ভাওয়াইয়া গান কতটা ভূমিকা রাখতে পারে?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: যে জাতি নিজের শেকড় ভুলে যায়; সে জাতি বিলুপ্তির হুমকির মুখে। আধুনিক সমাজের মানুষ কাকে বলে? যারা নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়! শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ নিজ বাড়িতে ভাওয়াইয়া ভাষা, কামতাপুরী, রাজবংশী ভাষায় কথা বলি। কিন্তু যখন একটু বাহির হই বাড়ি থেকে। কিংবা শহরে যাই। তখন এই ভাষায় কতটুকু কথা বলি? আমরা বলতে পারি এই ভাষা আমাদের মায়ের ভাষা। মায়ের ভাষা অবহেলা করলে জন্মদাত্রী মাকে অপমান করা হয়। তাই আমি মনে করি, ভাওয়াইয়া গান এক ধরনের আবেগিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগের সেতু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভাওয়াইয়ার সুর, ভাষা ও ভাব মানুষের মাটির টান, পরিবার, প্রেম, প্রকৃতি ও সমাজের বাস্তব জীবনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি মানুষকে নিজের শেকড়, পরিচয় ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত রাখে। তাই ভাওয়াইয়া গান শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয় বরং আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া মানবিকতা ও মাটির গন্ধ ফিরিয়ে আনার এক শক্তিশালী উপায়।

জরীফ উদ্দীন: ভাওয়াইয়া গানের ভাষা আঞ্চলিক অথচ এর আবেগ সর্বজনীন—আপনি কি মনে করেন এটিই এর সৌন্দর্য?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: অবশ্যই, আমি মনে করি এটাই ভাওয়াইয়া গানের আসল সৌন্দর্য। এর ভাষা আঞ্চলিক হলেও আবেগ সম্পূর্ণ সর্বজনীন ও মানবিক। আর একটা বিষয় বলা জরুরি মনে করি। ভাওয়াইয়া গান কি আসলে আঞ্চলিক? এটি বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে প্রচলিত। আর কোন ভাষার গান আছে যে তিনটি দেশের মানুষ চর্চা করে বা বোঝে! তাই অনায়াসে বলতে পারি আবেগ সর্বজনীন। ভালোবাসা, বিরহ, অপেক্ষা, পরবাসের কষ্ট বা জীবনের টানাপোড়েন—অনুভূতিগুলো শুধু বাংলাদেশ, ভারত বা নেপাল না; বিশ্বের যে কোনো মানুষের কাছে বোধগম্য। ভাওয়াইয়ার আঞ্চলিক ভাষা গানকে নিজের মাটির গন্ধ দেয় আর এর অনুভূতি সেই সীমা ছাড়িয়ে যায় মানুষের হৃদয়ে। তাই ভাওয়াইয়ার সৌন্দর্য নিহিত আছে এই বৈপরীত্যে—স্থানীয় ভাষায় বলা হলেও তা সব মানুষের হৃদয়ের ভাষা হয়ে ওঠে।

জরীফ উদ্দীন: বিশ্বায়নের যুগে যখন পাশ্চাত্য সংগীত তরুণদের টানে; তখন ভাওয়াইয়া গানের আসল শক্তি কোথায় দেখতে পান?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: গ্লোবালাইজেশনের যুগে পাশ্চাত্য সংগীত তরুণদের আকৃষ্ট করলেও ভাওয়াইয়া গানের আসল শক্তি নিহিত আছে মাটির টান ও হৃদয়ের সত্যতায়। ভাওয়াইয়া কোনো কৃত্রিম বা সাজানো সুর নয়—এটি মানুষের জীবনের গভীর অনুভূতি, প্রেম-বিরহ, পরবাসের বেদনা ও প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা থেকে জন্ম নেওয়া সংগীত। এর ভাষা সহজ, সুর আন্তরিক আর আবেগ নিখাদ। এ আন্তরিকতাই ভাওয়াইয়াকে সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে। পাশ্চাত্যের সংগীতে বাহ্যিক মোহ থাকলেও ভাওয়াইয়ার শক্তি তার আবেগের সততা ও সাংস্কৃতিক শেকড়ে, যা মানুষের ভেতরের অনুভূতিকে স্পর্শ করে—এটাই তার চিরকালীন আবেদন।

জরীফ উদ্দীন: আমরা জানি, আপনাকে ‘ভাওয়াইয়া ভাস্কর’ উপাধী দেওয়া হয়েছে। আপনার কাছে এ উপাধির মানে কী? এটা কি দায়িত্ব নাকি ভালোবাসা?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: ভাস্করের আভিধানিক অর্থ সূর্য। ভাওয়াইয়ার ওপর আমার কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে গুণীজনেরা আমাকে ‘ভাওয়াইয়া ভাস্কর’ খেতাব দিয়েছেন। ব্যাপক অর্থে ভাওয়াইয়া ভাস্কর কথার অর্থ ভাওয়াইয়ার ওপর সূর্যের আলো ছড়ানো বা সূর্যের ন্যায় ভাওয়াইয়াকে আলোকিত করা। আমি সেই কাজটিই আমরণ চেষ্টা করে যাবো। সত্যিকার অর্থে এটাই আমার ওপর তাদের দেওয়া একই সাথে দায়িত্ব এবং গভীর ভালোবাসার প্রভাব।

জরীফ উদ্দীন: ২০১৯ সালে আপনাকে নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে চাই—
ভূপতি ভূষণ বর্মা: আমার গুণগ্রাহী বন্ধুরা আমাকে নিয়ে আমার ৬২তম জন্মদিনে নিদানকালের বান্ধব নামে একটি সংবর্ধনাগ্রন্থ প্রকাশ করেন। গ্রন্থটিতে দুই বাংলার জনপ্রিয় গবেষক, শিক্ষক, কবি-লেখক, সাংবাদিক, গীতিকার, শিল্পী ও চলচ্চিত্র পরিচালকদের লেখা আছে। আমার জীবনব্যাপী শিল্প সাধনা, আলোচনা, স্মৃতিকথা, শিল্পীর কণ্ঠের গানসহ বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ আছে মোট ৩৫টি। ১টি সাক্ষাৎকার ও ৭টি কবিতাও আছে। যা আমার কাছে একটি পরম পাওয়া এবং ভাওয়াইয়ার কাছে আমাকে ঋণী করেছে।

জরীফ উদ্দীন: মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে, ঠিক তেমনই আপনারও বয়স বেড়ে যাচ্ছে—
ভূপতি ভূষণ বর্মা: আমি লালন ফকিরের মতো ১১৮ বছর বাঁচতে চাই। কারণ ভাওয়াইয়ার জন্য এখনও আমার অনেক কাজ বাকি। ভাওয়াইয়ার কাঙ্ক্ষিত কাজগুলো শেষ না করে আমি মরতে চাই না। কাজগুলো কী কী আমি এখন বলতে চাই না। যখন করবো; তখন সবাই দেখতে পাবেন।

জরীফ উদ্দীন: তরুণ প্রজন্মকে ভাওয়াইয়া গানের প্রতি আকৃষ্ট করতে কীভাবে কাজ করা উচিত?
ভূপতি ভূষণ বর্মা: তরুণ প্রজন্মকে ভাওয়াইয়া গানের প্রতি আকৃষ্ট করতে হলে আগে তাদের কাছে এটিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে হবে—তাদের ভাষা, রুচি ও মাধ্যমের সঙ্গে মিলিয়ে। প্রথমত, আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ও অ্যারেঞ্জমেন্ট ব্যবহার করে ভাওয়াইয়ার সুরকে আধুনিক সংগীতের ছোঁয়া দেওয়া যেতে পারে। তবে মূল সুর ও আঞ্চলিক ভাষার স্বকীয়তা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। দ্বিতীয়ত, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে লোকসংগীত বিষয়ক কর্মশালা, প্রতিযোগিতা ও উৎসব আয়োজন করা দরকার। যাতে তরুণরা কাছ থেকে শিখতে ও অনুভব করতে পারেন। তৃতীয়ত, ইউটিউব, ফেসবুক, স্পটিফাইয়ের মতো ডিজিটাল মাধ্যমে ভাওয়াইয়ার মানসম্মত উপস্থাপন বাড়ানো জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের বোঝাতে হবে—ভাওয়াইয়া শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, এটি তাদের নিজস্ব শেকড় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক।

এসইউ/এমএস

Read Entire Article