ভাঙা প্রাচীর ও বেহাল ড্রেন-সড়কে খুঁড়িয়ে চলছে ঝিনাইদহ বিসিক

2 weeks ago 8

মূল ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর ভেঙে একাকার। ভারী মালবাহী যানবাহন চলাচলে গেটও ভেঙে গেছে বহু বছর আগে। তারপর আর নির্মাণ করা হয়নি গেট। ফলে ঝিনাইদহ বিসিক শিল্প এলাকায় এখন নিরাপত্তা ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে। সেইসঙ্গে জেলার একমাত্র শিল্প এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কেও হয় না নিয়মিত সংস্কার। ভেঙে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেও ড্রেনের পানি ঢুকে পড়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও সরকারি উদ্যোগে বাড়েনি শিল্প নগরীর আয়তন। ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে জমি কিনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বিসিক ঘেঁষে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, জোড়াতালি দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিসিক নগরী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের দক্ষিণে ঝিনাইদহ বিসিক শিল্প নগরীর অবস্থান। ১৯৮৮ সালে যাত্রা শুরু হওয়া বিসিক নগরীর ভেতরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ড্রেনের ভেতরে জমে আছে ময়লা আবর্জনা। কোথাও কোথাও ভেঙে আছে ড্রেনের স্লাব। ড্রেনের অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড্রেনের পানি বের হতে না পারায় বৃষ্টির সময় সড়কে চলে আসে পানি। যে কারণে রাস্তায় পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

বিসিকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নিয়মিত বিসিক কর্তৃপক্ষ সড়ক ও ড্রেন মেরামত করে না। বারবার তাগাদা দিয়েও ড্রেন সংস্কার ও রাস্তা মেরামতের কাজ করানো যাচ্ছে না। ফলে বৃষ্টির সময় মালবাহী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

ভাঙা প্রাচীর ও বেহাল ড্রেন-সড়কে খুঁড়িয়ে চলছে ঝিনাইদহ বিসিক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, বিসিক শিল্পনগরী একটি নিরাপদ শিল্প এলাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ঝিনাইদহ বিসিকের মূল সীমানা প্রাচীর মহাসড়ক ঘেঁষা। সেই সীমানা প্রাচীর বছরের পর বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। ফলে অরক্ষিত হয়ে গেছে পুরো বিসিক এলাকা। যে কারণে সন্ধ্যা হলেই বিসিক এলাকায় বেড়ে যায় মাদকসেবীদের আড্ডা। স্থানীয় বখাটে ও মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণের কারণে বিসিক সংশ্লিষ্ট ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। প্রায় ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

শ্রমিকদের অভিযোগ, সীমানা প্রাচীর না থাকায় বাইরের লোকজন বিকেল থেকে শুরু করে রাতভর বিসিকের ভেতরে মাদকসেবনসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করে। এ নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গেও নানা সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। বিসিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বারবার তাগাদা দিলেও আজ পর্যন্ত মেলেনি সুরাহা।

আরও পড়ুন-
মাঠে অবিক্রীত ৮ লাখ টন লবণ, তবুও আমদানির তোড়জোড়!
অব্যবস্থাপনায় ও অবকাঠামো সংকটে ধুঁকছে ঠাকুরগাঁও বিসিক
৩ বছরে প্লট বরাদ্দ ২৩৪, উৎপাদনে মাত্র একটি

এদিকে বিসিকে মালবাহী যানবাহন চলাচলের গেটটি বছরের পর বছর ভেঙে পড়ে আছে। এতে কারখানাগুলোর নিরাপত্তাও পড়েছে ঝুঁকির মুখে। ঝিনাইদহ বিসিক শিল্প নগরী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় এবং গেইট না থাকায় যেকোনো সময় বড় ধরনের চুরি বা লুটপাটের আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

ভাঙা প্রাচীর ও বেহাল ড্রেন-সড়কে খুঁড়িয়ে চলছে ঝিনাইদহ বিসিক

জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় ঝিনাইদহ শহরের উপকণ্ঠে ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, (বিসিক) ঝিনাইদহ নগরী প্রতিষ্ঠা করে। মাত্র ১৫ একর জায়গা নিয়ে পরের বছর ১৯৮৮ সালে বিসিকের মূল কাজ শুরু হয়। ওই সময় মোট ৪৬টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঝিনাইদহ বিসিক। পরে ওইসব প্লট বরাদ্দ নেন বিভিন্ন শিল্প বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা। বর্তমানে ৪৬টি প্লটে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনমুখী কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। তবে এসব প্লটের বরাদ্দ নিয়েছেন ৩৫ জন বিনিয়োগকারী। এদের মধ্যে কেউ কেউ একাধিক প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।

ঝিনাইদহ বিসিকে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের কৃষিজ রাসায়নিক, সার, প্রিন্ট প্যাকেজিং, খাদ্যপণ্য, পাটজাত পণ্য উৎপাদন করা হয়। তবে গত তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও সম্ভাবনাময় বিসিক এলাকার আয়তন বাড়েনি। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ বিসিকের দেয়াল ঘেঁষে ব্যক্তিগত উপায়ে জমি কিনে প্লট বাড়িয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ঝিনাইদহ বিসিকে পরিচালিত মিমপেক্স এগ্রো কেয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক তাহির সুলাইমান পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, বিসিকের আয়তন অল্প। ১৫ একর জায়গাতো খুব বেশি না। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এখানে আগ্রহ দেখাবে না। আমরা যেমন কারখানার পরিধি বাড়াতে নিজস্ব উদ্যোগে জায়গা কিনেছি। এই বিসিকে সীমাবদ্ধতা আছে, সম্ভাবনাও আছে। যদি এটির আয়তন বাড়িয়ে বৃহৎ শিল্পনগরী করা যায়, তাহলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে, শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

বিসিকে পরিচালিত জামান জুট মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক (হিসাব) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঝিনাইদহ বিসিকের সম্প্রসারণ জরুরি। সম্প্রসারণ করা গেলে এখানে অনেক সম্ভাবনা আছে। এই বিসিকে ব্যবসা ও উৎপাদনের ভালো পরিবেশ রয়েছে। তবে সীমানা প্রাচীর ও মেইন গেইট অরক্ষিত থাকায় আমাদের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। বাইরের লোকজন কে কখন কী করে সেটাতো ঠেকানো কষ্ট। কারখানাগুলোও অরক্ষিত থাকে বলা যায়। ড্রেনেজ ও সড়ক সংস্কার প্রয়োজন। বিসিকের পক্ষ থেকে প্লট বরাদ্দ, বিদ্যুৎ পানি সরবরাহ ছাড়া তেমন কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয় না। রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার করা হলে আমাদের কাজের পরিবেশ আরও ভালো হবে।

ভাঙা প্রাচীর ও বেহাল ড্রেন-সড়কে খুঁড়িয়ে চলছে ঝিনাইদহ বিসিক

বিসিকের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, এখানে আমি নতুন এসেছি। তবে ঝিনাইদহ বিসিকের আয়তন ছোট হলেও পরিপাটি। বিসিক সম্প্রসারণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশা করছি, সামনে হয়ত ভালো কোনো খবর আসবে।

ঝিনাইদহ জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ঝিনাইদহ জেলা কৃষিসমৃদ্ধ জেলা। কৃষি ও মৎস্য চাষে ঝিনাইদহ অনেক এগিয়ে। আমাদের বিসিকে আধুনিক কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ হাব তৈরি করা সম্ভব। ঝিনাইদহ বিসিককে আধুনিক কৃষিশিল্প ভিত্তিক নগরীতে রূপান্তর করা যেতে পারে। আমরা সম্মিলিতভাবে সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

ঝিনাইদহ বিসিকের উপব্যবস্থাপক সেলিনা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের নানা সংকট রয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আগেও আমরা আমাদের বিসিকের সমস্যাগুলোর কথা জানিয়েছিলাম। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে সীমানা প্রাচীর, গেট, ড্রেন ও অভ্যন্তরীণ সড়ক সংস্কার করা সম্ভব। আমরা নতুন করে আবারো এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এই বিসিকে যারা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তারা সার্বিক পরিবেশ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। বিসিকের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এরইমধ্যে গত মাসে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টিম ঝিনাইদহ সফর করে গেছেন। প্রাথমিক যাচাই শেষ হয়েছে। নতুন করে ১০০ একর জমিতে বিসিকের সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।

এফএ/এমএস

Read Entire Article