ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে বাংলাদেশের সময়-খরচ বাড়বে

5 months ago 45

নিশ্চিতভাবেই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশের জন্য ভারত একটি ক্রমবর্ধমান রপ্তানি গন্তব্য। নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে রপ্তানি বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে একথা বলেন।

শনিবার (১৭ মে) ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রীসহ কিছু পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে।

যেহেতু তাদের কলকাতা দিয়ে রপ্তানি করতে হয়, তাই সময় ও খরচ বাড়বে। ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারানোর কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সুতরাং, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতে আমাদের রপ্তানি কমে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য পাঠানো বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ড. জাহিদ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশ সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো ভারত।

তিনি বলেন, পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য সমস্ত স্থলবন্দর বন্ধ রয়েছে। এটি ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কারণ আমাদের রপ্তানি আয়ের বেশিরভাগই তৈরি পোশাক থেকে আসে এবং এর সিংহভাগ স্থলবন্দর দিয়ে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশিরভাগই সেভেন সিস্টারস (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো) অঞ্চলের জন্য। যেহেতু তাদের কলকাতা দিয়ে রপ্তানি করতে হয়, তাই সময় ও খরচ বাড়বে। ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারানোর কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সুতরাং, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতে আমাদের রপ্তানি কমে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কীভাবে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সমাধানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথমে জানতে হবে কেন এটি আরোপ করা হয়েছে, তারপর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশকে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। আর ভারত সরকারের উচিত কারণ ব্যাখ্যা করা কেন তারা এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বচ্ছতার অংশ।

আমরা যদি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক পাল্টা শুল্ক আরোপের দিকে তাকাই, তারা নতুন শুল্কহার সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছে, কেন এই সমস্যাগুলি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান করা উচিত সেটা জানিয়েছে। নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতে রপ্তানি করা ব্যবসায়ীদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

ভারত সরকারের উচিত কারণ ব্যাখ্যা করা কেন তারা এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বচ্ছতার অংশ

শনিবার (১৭ মে) দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের কিছু নির্দিষ্ট পণ্য ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। কেবল নাভা শেভা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়েই প্রবেশের অনুমতি থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞা ভারতের মধ্যদিয়ে পরিবহনকারী বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, যা নেপাল ও ভুটানের উদ্দেশে পাঠানো হবে। এ নির্দেশিকা কার্যকর করা হয়েছে।

ফল-ফলের স্বাদযুক্ত ও কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী, তুলা ও সুতি সুতার বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পিভিসি তৈরিপণ্য আমদানি, নিজস্ব শিল্পের জন্য ইনপুট তৈরি করে এমন রঙিন পদার্থ, রং, প্লাস্টিসাইজার, কাঠের আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের কোনো স্থল কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস)/ ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) ও পশ্চিমবঙ্গের (এলসিএস) চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে বাংলাদেশ থেকে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও চূর্ণী পাথর প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।

এর আগে গত মাসে তৎকালীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি স্থগিত করে। আর গত ৯ এপ্রিলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে ভারত।

আইএইচও/এএসএ/জেআইএম

Read Entire Article