ফিলিপাইনে ভয়াবহ টাইফুন ‘কালমায়েগি’ আঘাত হানার পর ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দেশটির মধ্যাঞ্চলে প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, ভেসে গেছে গাড়ি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। অনেক মানুষ বাসা-বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুর্যোগের কারণে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে, সেই সঙ্গে আর আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতের ঠিক আগে শক্তিশালী এই ঝড়টি প্রথম স্থলে আঘাত হানে। এরপর স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে টাইফুনটি সেবু ও নেগরোস দ্বীপ অতিক্রম করে। সেময় ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। দমকা হাওয়া ছিল ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
সেবুর তথ্য কর্মকর্তা রন রামোস এএফপিকে ফোনে বলেন, অনেক মানুষ ছাদে আটকা পড়ে উদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন। এমনকি, কিছু আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি ঢুকে গেছে।
সেবু সিটির বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী ডন ডেল রোসারিও জানান, তিনি পরিবারসহ উপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। পানি হঠাৎ করেই উঠতে শুরু করে। রাত ৩টার দিকে বন্যা শুরু হয়, আর ৪টার মধ্যে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেউ ঘর থেকে বের হতেও পারেনি।
ডেল রোসারিও আরও বলেন, আমি ২৮ বছর ধরে এখানে আছি, কিন্তু এমন ভয়াবহ কিছু কখনো দেখিনি। গত সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যারা এখনো তাঁবুতে বাস করছিলেন, তাদেরও নিরাপত্তার স্বার্থে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স অফিসের ডেপুটি প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো জানান, টাইফুনের গতিপথ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে বোহল প্রদেশে গাছ চাপায় একজন পুরুষ নিহত হয়েছেন ও দক্ষিণ লেইতে প্রদেশে পানিতে ডুবে মারা গেছেন আরেকজন বয়স্ক ব্যক্তি।
লেইতে দ্বীপে দুর্যোগ কর্মকর্তা রোয়েল মনতেসা জানান, সোমবার পালো ও তানাউয়ান শহরে জরুরি সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছিল। ২০১৩ সালে এই দুই শহরেই সুপার টাইফুন হাইয়ান আঘাত হেনে ৬ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
প্রতি বছর গড়ে ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে ফিলিপাইনে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দুটি বড় টাইফুনের ধাক্কা খেয়েছে দেশটি, যার মধ্যে ছিল সুপার টাইফুন রাগাসা। বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করছেন, মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশটিতে ঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই বাড়ছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ভারিলা আরও বলেন, প্রাকৃতিক জলবায়ু ধারা লা নিনা’র সময় সাধারণত টাইফুনের সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্বাংশে সমুদ্রের তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়াই এই লা নিনা অবস্থার কারণ।
ফিলিপাইনের আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষজ্ঞ চারম্যাগনে ভারিলা জানিয়েছেন, টাইফুন কালমায়েগির মধ্য দিয়েই ফিলিপাইন তার বার্ষিক গড় ২০টি ঝড়ের সীমায় পৌঁছে গেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিন থেকে পাঁচটি ঝড় দেখা যেতে পারে।
সূত্র: এএফপি
এসএএইচ

3 days ago
5









English (US) ·