দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। গিজা পিরামিডের পাদদেশে দাঁড়িয়ে এই মহৎ স্থাপনা কেবল একটি জাদুঘর নয়—এটি মিশরের ইতিহাস, প্রাচীন সভ্যতার গৌরব এবং মানব সংস্কৃতির এক অনন্য উজ্জ্বল দলিল।
শনিবার (১ নভেম্বর) মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এক বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন।

মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এই উদ্বোধনকে এরই মধ্যে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৭৯টি সরকারি প্রতিনিধি দল; যার মধ্যে ৩৯টি প্রতিনিধিদল ছিলেন রাজা, যুবরাজ, রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের নেতৃত্বে।
এত বিপুল আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ প্রমাণ করে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার প্রতি বিশ্বের অগাধ আগ্রহ এবং বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় মিশরের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ও শ্রদ্ধা।

২০০৫ সালে শুরু হওয়া এই জাদুঘরের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই দশক। ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) মার্কিন ডলার। প্রায় ৪৭০,০০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে নির্মিত এ প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে মিশরীয় সভ্যতার ৫০ হাজারেরও বেশি দুর্লভ নিদর্শন—যা বিশ্বের কোনো একক সভ্যতাকে ঘিরে নির্মিত জাদুঘরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।
জাদুঘরটির প্রবেশ পথেই দর্শনার্থীদের চোখে পড়ে ফেরাউন (রামসেস দ্বিতীয়ের) ৮২ টন ওজনের বিশাল ভাস্কর্য—যেন হাজার বছরের ইতিহাসে প্রবেশের এক প্রতীকী দ্বার। জাদুঘরের অভ্যন্তরে বিশাল সিঁড়ির ধাপে ধাপে সাজানো শতাধিক প্রাচীন ভাস্কর্য ও স্তম্ভ তুলে ধরে মিশরের রাজ বংশীয় ইতিহাসের ধারাবাহিক কাহিনি।

জাদুঘরটির প্রধান আকর্ষণ
তুতানখামেনের ধন ভাণ্ডার — স্বর্ণ মুখোশ, সিংহাসন, রথ, অলংকারসহ সম্পূর্ণ সংগ্রহ প্রথমবারের মতো একসঙ্গে প্রদর্শিত। তাছাড়াও খুফুর সোলার বোট — পিরামিডের পাদদেশ থেকে আবিষ্কৃত ৪,৫০০ বছরের প্রাচীন রাজকীয় নৌযান। ফেরাউন (রামসেস দ্বিতীয়), সেতি প্রথমসহ নানা রাজাদের বিশাল বিশাল ভাস্কর্য, রাজপরিবারের মমি, প্রাচীন প্যাপিরাস দলিল, দেয়ালচিত্র, স্বর্ণালংকার এবং দেবদেবীর মূর্তি।

কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, এই জাদুঘর প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ লাখ পর্যটক আকর্ষণ করবে।
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম শুধু একটি স্থাপনা নয়—এটি প্রাচীন মিশরের জীবন্ত ইতিহাস। যেখানে ফেরাউনদের ঐশ্বর্য, শিল্প ও স্থাপত্যের জৌলুস এবং হাজার বছরের সংস্কৃতি মিশে তৈরি করেছে এক মহাকাব্যিক অভিজ্ঞতা। আজ থেকে প্রাচীন মিশর আর শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়; এসে তা দেখা, অনুভব করা এবং ইতিহাসের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া—এক বাস্তবতার নাম।
এমআরএম

22 hours ago
9









English (US) ·