মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ, মণ ২ হাজার করার দাবি

14 hours ago 5

রাজবাড়ী জেলায় এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ ও পরিচর্যায় ব‍্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এই পেঁয়াজ বাজারে উঠতে সময় লাগবে প্রায় ২ থেকে ৩ মাস। এ বছর এই পেঁয়া‌জ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত, বীজ (গু‌টি) কেনা, সার-কীটনাশক, শ্রমিক মজুরিসহ প্রতি বিঘা জ‌মি‌তে চাষিদের খরচ হচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ত‌বে নি‌জের জ‌মি হ‌লে সে‌ক্ষে‌ত্রে প্রায় ২০ থে‌কে ২৫ হাজার টাকা কম খরচ হ‌চ্ছে। কারণ ১ বিঘা জ‌মি লীজ নি‌তে চাষিদের গুন‌তে হয় প্রায় ১৫ থে‌কে ২৫ হাজার টাকা।

চাষিদের দাবি, এ বছর পেঁয়াজ বীজের (গু‌টি) দাম কিছুটা কম হলেও জ‌মি লীজ নি‌য়ে প্রস্তুত, সার-কীটনাশক, সেচ, শ্রমিক মজুরির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে তাদের খরচ। তারপরও লা‌ভের আশায় চাষ কর‌ছেন। ত‌বে কৃ‌ষি উপকর‌ণের দাম অনুযায়ী কৃষক বাঁচা‌তে হ‌লে মৌসুমে প্রতি মণ পেঁয়াজের বাজার মূল্যে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হ‌বে। বিপর্যয় না হ‌লে প্রতি‌ বিঘায় এবার ৫০ থে‌কে ৬০ মণ ফলন আশা কর‌ছেন চাষিরা।

এ বছর চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন স্থানের মাঠে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমিতে আবাদ সম্পূর্ণ হয়েছে। এবার জেলায় সবচেয়ে বেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে গোয়ালন্দ, কালুখালী ও বা‌লিয়াকা‌ন্দি‌তে। এ ছাড়া রাজবাড়ী সদর ও পাংশায় এই পেঁয়াজ আবাদ করছেন চাষিরা। এই পেঁয়াজ উত্তোল‌নের আগ মুহূর্ত ডি‌সেম্ব‌রের শেষ বা জানুয়ারি থে‌কে শুরু হ‌বে হা‌লি পেঁয়া‌জের আবাদ।

মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ, মণ ২ হাজার করার দাবি

জানা যায়, রাজবাড়ী পেঁয়াজ চাষের সমৃদ্ধ জেলা। এখানে সারাদেশের প্রায় ১৬ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম জেলা। ফ‌লে জেলার উৎপা‌দিত পেঁয়াজ সারা‌দে‌শের চা‌হিদার বৃহৎ এক‌টি অংশ পূরণ ক‌রে। এখা‌নে শী‌তের শুরু‌তে কম সম‌য়ের জন্য সংরক্ষণকৃত মু‌ড়িকাটা এবং প‌রে প্রায় সারাবছর সংরক্ষণকৃত হা‌লি পেঁয়া‌জের আবাদ হ‌য়। এরমধ্যে জেলায় পেঁয়াজের মূল আবা‌দের ৬ ভা‌গের একভাগ মু‌ড়িকাটা পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজ জেলার ৫ উপজেলায় কমবেশি আবাদ হলেও গোয়ালন্দ, কালুখালী, বা‌লিয়াকা‌ন্দিতে সবচেয়ে বেশি হয়।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা‌ গে‌ছে, জেলায় প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। এবার গোয়াল‌ন্দে ২ হাজার ২৩০, কালুখালী‌তে ১ হাজার ৬৬৫, বা‌লিয়াকা‌ন্দি‌তে ১ হাজার ২০০, পাংশায় ৪২৫ ও রাজবাড়ী সদ‌রে ৩৫৫ হেক্টর জ‌মিতে মু‌ড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হ‌চ্ছে।

আরও পড়ুন
ঘাস থেকে গুড় তৈরি করে স্বাবলম্বী খাদিজা বেগম
বন্যা থেকে বাঁচিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকদের অভিনব সবজি চাষ

কৃষক হা‌লিম শেখ জাগো নিউজকে ব‌লেন, ‘এবার আমি ৬ বিঘা জমিতে মু‌ড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করছি। সার-কীটনাশক, তেল, শ্রমিকসহ সবকিছুর দাম বেশি। এতে আমার প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। সারের দাম যদি কম থাকতো এবং পেঁয়াজ ওঠার পর ২ হাজার টাকা মণ পেতাম, তাহ‌লে কিছুটা লাভবান হতাম। ২ হাজার টাকার নিচে মণ হলে আমা‌দের লোকসানে পড়তে হ‌বে।’

মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ, মণ ২ হাজার করার দাবি

অপর কৃষক ঈসা জাগো নিউজকে ব‌লেন, ‘এখন পেঁয়াজ-রসুন লাগাতে গিয়ে অসহায় হ‌য়ে প‌ড়েছি। পেঁয়াজের গুটি কিনেছি ২৫০০-২৬০০ টাকা মণ। পেঁয়াজ বিক্রির সময় ১৫০০-২০০০ টাকা বিক্রি করতে হয়। সবকিছু যেভাবে দাম দি‌য়ে কিন‌তে হচ্ছে; সেই হিসেবে য‌দি ফলন ভালো না হয়, তাহলে একেবারে শেষ হয়ে যাবো। এবার কী প‌রিমাণ ফলন হ‌বে বুঝ‌তে পারছি না। আশা করছি ভালো ফলন হ‌বে। ভালো ফলন হলে বিঘায় ৫০-৬০ মণ হ‌বে। খারাপ হলে ৩০-৩৫ মণের বেশি হবে না। তখন যদি দাম না থাকে তাহলে আমা‌দের অবস্থা খুবই খারাপ হবে।’

কা‌দের মোল্লা ও হা‌সেম আলী শেখ জাগো নিউজকে ব‌লেন, ‘এবার পেঁয়াজ আবা‌দে অনেক খরচ হ‌চ্ছে। জমি, সার, তেল, লাঙলসহ সবকিছুর দাম বেশি। কিন্তু আমরা বিক্রি করতে গেলে দাম পাই না। এবার সব মিলি‌য়ে এক বিঘায় প্রায় ৫০ থে‌কে ৬০ হাজার টাকা খরচ হ‌চ্ছে।’

মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ, মণ ২ হাজার করার দাবি

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার গোলাম রাসূল জাগো নিউজকে ব‌লেন, ‘জেলায় বর্তমা‌নে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ চলমান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবাদ সম্পন্ন হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা কর‌ছি এ বছর জেলায় প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।’

তিনি বলেন, ‘জেলায় সারের পর্যাপ্ত মজুত আছে। মাঠ পর্যা‌য়ে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। আগামী মা‌সে সা‌রের বরাদ্দ আরও বে‌শি আস‌বে। ফ‌লে সা‌র নি‌য়ে কোনো সমস্যা হ‌বে না। কোথাও কোনো অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article