ম্যারাডোনা: আজও অমর এক আবেগের নাম

4 hours ago 5
মৃত্যু তাকে স্পর্শ করেছে, কিন্তু ভক্তদের হৃদয়ে তিনি কখনো মরেননি। আজ, ৩০ অক্টোবর, পৃথিবী আবারও স্মরণ করছে সেই মানুষটিকে, যিনি শুধু ফুটবল খেলেননি—ফুটবলকে নতুন করে সংজ্ঞা দিয়েছেন। তার নাম ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। যেখানে অন্যরা ফুটবল খেলতেন পেশা হিসেবে, ম্যারাডোনা খেলতেন আবেগ দিয়ে, বিদ্রোহ দিয়ে, শিল্প দিয়ে। মাঠে বল পা ছুঁয়ে নাচলে মনে হতো—এ যেন কোন মানু্ষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। বুয়েনোস আইরেসের রাস্তায় শুরু ১৯৬০ সালের এই দিনে, আর্জেন্টিনার এক দরিদ্র উপশহর ভিয়ার ফিয়োরিতোয় জন্ম এক কিশোরের—যে বড় হবে অনাহারে, কিন্তু পেটের ক্ষুধার চেয়ে বড় ছিল তার গোলের ক্ষুধা। মাটির মাঠে ছেঁড়া বল ঘুরিয়ে সে প্রমাণ দিচ্ছিল, প্রতিভা কখনো জন্মসনদ দেখে আসে না। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে অভিষেক, ১৭ বছরেই জাতীয় দলের জার্সি, আর ২৫ বছর বয়সে মেক্সিকো বিশ্বকাপে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ একক পারফরম্যান্স। ১৯৮৬—যে বছর মানুষ ঈশ্বর দেখেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তার দুটি গোল—একটি হাতে, অন্যটি পায়ে—আজও মানুষের চোখে ভাসে। প্রথমটি ‘হ্যান্ড অব গড’, দ্বিতীয়টি ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। একই ম্যাচে প্রতারণা ও পরিপূর্ণতা, পাপ ও পরমসৌন্দর্য—সব একসঙ্গে যেন ফুটবল নামের নাটকের চূড়ান্ত দৃশ্য। এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। রোমের কলোসিয়ামের মতো মেক্সিকো সিটির আজটেকা স্টেডিয়াম সাক্ষী ছিল—একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে নিজের দেশের জন্য দেবতা হয়ে ওঠে। নেপলসে এক অমরত্ব যখন ইউরোপে তাকে অবহেলা করেছিল বড় ক্লাবগুলো, তখন ইতালির এক গরিব শহর নেপলস তাকে বুকে টেনে নিয়েছিল। নাপোলিকে এনে দিয়েছিলেন সিরি-আ এর প্রথম শিরোপা, ইউরোপিয়ান গৌরব। আজও নেপলসে তার ছবি ঘর, দোকান, চার্চে টাঙানো—তিনি যেন ফুটবলার নন, তিনি এক আধুনিক সাধু। ম্যারাডোনা শুধু খেলোয়াড় নন, দক্ষিণ বনাম উত্তর, দরিদ্র বনাম ক্ষমতাবান—এই সামাজিক লড়াইয়ের প্রতীকও ছিলেন। পতনের পরও পূজা তার জীবন নিখুঁত ছিল না—মাদক, রাজনীতি, বিতর্ক সবই ছিল। কিন্তু ম্যারাডোনা কখনো অভিনয় করেননি। ভালোবাসলে তিনি উন্মুক্তভাবে ভালোবাসতেন, ভুল করলে সোজাসুজি মুখোমুখি হতেন। হয়তো এজন্যই মানুষ তাকে এখনো ভালোবাসে, কারণ তিনি ছিলেন  ‘খাঁটি মানুষ’—ত্রুটিসহ, দীপ্তিসহ। মৃত্যু ও উত্তরাধিকার ২০২০ সালের নভেম্বরে যখন খবর এল—ম্যারাডোনা আর নেই, তখন সারা পৃথিবী থমকে গিয়েছিল। আর্জেন্টিনায় তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক, নেপলসে চোখের জল, নাপোলির স্টেডিয়ামের নতুন নাম—“স্টাদিও দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।” কিন্তু মৃত্যু তাঁকে মুছে দিতে পারেনি। আজও যখন কোনো কিশোর গলির মাঠে বলে জাদু দেখায়, মানুষ বলে—“দেখে মনে হচ্ছে ম্যারাডোনা ফিরে এসেছে।” ম্যারাডোনা একবার বলেছিলেন— “যদি আমি মরে যাই, আমি চাই আমাকে মানুষ ফুটবলের জন্যই মনে রাখুক।” আজ তার জন্মদিনে মনে হয়, পৃথিবীর প্রতিটি বল, প্রতিটি গোল, প্রতিটি ফুটবল প্রেমীর নিঃশ্বাসে তিনি আছেন।  
Read Entire Article