যিনি মবের ভয় করছেন, তিনি হয়তো দোসর ছিলেন: প্রেস সচিব

4 days ago 8

গণমাধ্যম বর্তমানে অভূতপূর্ব স্বাধীনতা উপভোগ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তবে তিনি এটাও বলেন, যারা এখন ‘মবের ভয়’ পাচ্ছেন, তারা হয়তো অতীতে দোসর ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, অনেকে বলেন মবের ভয়ে আছেন। আমি তো কোথাও সেই ভয় দেখি না। যিনি মবের ভয় করছেন, তিনি হয়তো তখন দোসর ছিলেন। এখন আপনি যদি দোসর হন, আমি তো আপনার পাপ ক্লিন আপ করবো না।

তিনি বলেন, যারা আজকে বলছেন মবের ভয় আছেন বেশিরভাগই দেখবেন এরা দোসর ছিলেন। ভয়টা নিজে নিজে থেকেই আসছে। আমরা বলেছি কোনো গণমাধ্যমে কোনো ধরনের আক্রমণ আমরা সহ্য করবো না। সে কথা আমরা রেখেছি।

শফিকুল আলম বলেন, বাইরের দেশে গণমাধ্যম নিজেদের ভুল স্বীকার করে জনসম্মুখে ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। ওরা ন্যায়পাল রাখে, দেখে তাদের রিপোর্ট ঠিক ছিল কি না। ভুল থাকলে প্রকাশ্যে স্বীকার করে ক্ষমা চায়। কিন্তু এখানে তো সেই সংস্কৃতি নেই।

রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের মিথ্যা তথ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ভালো সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিয়ত মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল কী ভূমিকা নেবে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০০, ৩০০, ৫০০ মিথ্যা খবর আসবে, এটাকে ট্যাকেল দেবেন কীভাবে? যে কোনো দলের জন্য এটা ভয়াবহ রকমের চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন
গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশে চূড়ান্ত অনুমোদন, শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
পাখির খাদ্যের আড়ালে পাকিস্তান থেকে এলো মাদকপণ্য

সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর বলেন, এখন মিডিয়া হাউস নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, মিডিয়া হাউসগুলো শুধু সংবাদ পরিবেশন করে না, তারা ভেটো ক্ষমতার মতো আচরণ করতে চায়, যেন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই ঘটতে না পারে। বড় ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন মিডিয়া খুলে ফেলছেন। সাংবাদিকদের সংগঠন থাকতে পারে, তবে সেটি দলীয় প্রভাবমুক্ত হতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, গণমাধ্যমের পুরো ইকোসিস্টেম এখন সাংবাদিকদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। পোশাকশ্রমিকের মতো বেতনে সাংবাদিক নিয়োগ হয়। ৫ আগস্টের পর বহু গণমাধ্যমের মালিকানা ও শীর্ষপদে পরিবর্তন এসেছে। দলীয় মদতপুষ্ট লোকেরা সেখানে গেছেন। তারা আগে এক দলের ন্যারেটিভ প্রচার করতেন, এখন অন্য দলেরটা করছেন।

এসময় তিনি গণমাধ্যমে ক্রস ওনারশিপ বন্ধের আহ্বান জানান। মুশফিক উস সালেহীন বলেন, আমাদের ইশতেহারে এটা স্পষ্টভাবে থাকবে- এক মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম থাকা উচিত নয়। এক মালিক, এক গণমাধ্যম নীতি থাকা দরকার।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, গণমাধ্যমে দৃশ্যমান কোনো সংস্কার চোখে পড়েনি। শেখ হাসিনা আমলের সিস্টেমই এখনো চলছে। এর মধ্যেই দুটো টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো হতো, কিন্তু তা হয়নি।

সাবেক উপদেষ্টাদের ব্যর্থতার সমালোচনা করে রাশেদ খাঁন বলেন, যারা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ ছিলেন, যেমন নাহিদ ইসলাম বা এনসিপির নেতা- তারা যদি তাদের মন্ত্রণালয়ে সংস্কার করে দেখাতে পারতেন, তাহলে তারা রোল মডেল হতে পারতেন। কিন্তু তারা পারেননি। যখন গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রশক্তি ব্যর্থ হচ্ছে, তখন আগামী প্রজন্ম কীভাবে সফল হবে?

ফটোকার্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি দশ মিনিটের বক্তব্য দেই, কিন্তু কেউ সেটার থেকে দুই লাইন কেটে ফটোকার্ড বানিয়ে ফেসবুকে দেয়। মানুষ পুরো খবর না পড়ে ওই কার্ডই শেয়ার করে। এতে বিকৃত বার্তা ছড়ায়, অনেক সময় নেতাদের চরিত্রহনন হয়। ফটোকার্ডের নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। ফটোকার্ড বাদ দিতে বলছি না, কিন্তু এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

এসএম/কেএসআর/জেআইএম

Read Entire Article