রক্তদান কেন করবেন

14 hours ago 5

স্বেচ্ছায় রক্তদান যে একটি মহৎ কাজ, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু শুধু গ্রহীতা নয়, রক্তদান করা দাতার জন্যও বেশ কিছু উপকার বয়ে আনে। এগুলো সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।

তবে নিয়মিত রক্তদান করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু নিয়ম আছে, যেগুলো দাতা ও গ্রহীতা, উভয় পক্ষের জানা জরুরি। আজ (২ নভেম্বর) জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস উপলক্ষ্যে চলুন জেনে নেওয়া যাক রক্তদান করার উপকারিতা ও নিয়ম -

১. জীবন বাঁচায়

রক্তদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকার হলো — এটি মানুষের জীবন বাঁচায়। একজন দাতার দেওয়া রক্ত তিনজন পর্যন্ত রোগীর জীবন রক্ষা করতে পারে। দুর্ঘটনায় রক্তক্ষরণ, অস্ত্রোপচার, সন্তান জন্মের জটিলতা, ক্যানসার চিকিৎসা বা রক্তস্বল্পতা — বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই রক্তই হয়ে ওঠে জীবনরক্ষাকারী উপাদান। তাই রক্তদান শুধু উদারতার প্রকাশ নয়, এটি মানবজীবনের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক।

২. হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বাড়ায়

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরের অতিরিক্ত আয়রনের পরিমাণ কমে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমে গেলে ধমনিতে প্রদাহ বা ব্লকেজ তৈরি হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়। রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে আয়রনের ভারসাম্য ঠিক থাকে, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।

রক্তদান কেন করবেন

৩. নতুন রক্ত তৈরিতে সহায়তা করে

রক্তদানের পর শরীর হারানো রক্ত পুনরায় তৈরি করতে কাজ শুরু করে। এতে নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয়, যা রক্তসঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে এবং অস্থিমজ্জাকে সক্রিয় রাখে। এই প্রাকৃতিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শরীরকে তরতাজা ও প্রাণবন্ত রাখতে সহায়তা করে।

৪. নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়

রক্ত দেওয়ার আগে প্রতিটি দাতার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয় — যেমন রক্তচাপ, পালস, হিমোগ্লোবিন, ওজন ও সংক্রামক রোগের স্ক্রিনিং। ফলে রক্তদান শুধু মানবসেবা নয়, এটি নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থাও জানতে সাহায্য করে। অনেক সময় এই পরীক্ষার মাধ্যমেই অনেকে অজানা স্বাস্থ্যসমস্যা দ্রুত শনাক্ত করতে পারেন।

৫. স্ট্রেস কমায় ও মানসিক প্রশান্তি দেয়

রক্তদান মানসিক দিক থেকেও গভীর প্রভাব ফেলে। যখন আপনি জানেন আপনার দেওয়া রক্ত কারও জীবন বাঁচিয়েছে, তখন শরীরে নিঃসৃত হয় অক্সিটোসিন ও এন্ডরফিন নামের সুখহরমোন। এগুলো মানসিক চাপ কমায়, মনের প্রশান্তি বাড়ায় এবং আত্মতৃপ্তি দেয়। অনেক নিয়মিত দাতা বলেন, রক্তদানের পর তাদের মন ভালো থাকে, উদ্বেগ কমে যায়।

৬. সমাজে সহমর্মিতা ও একতা তৈরি করে

রক্তদান মানুষে মানুষে সহানুভূতি ও একতার বন্ধন গড়ে তোলে। এটি সামাজিক সচেতনতা বাড়ায় এবং সমাজে একধরনের মানবিক দায়িত্ববোধ তৈরি করে। নিয়মিত রক্তদান কার্যক্রম সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা একটি সুস্থ, সচেতন ও সহানুভূতিশীল সমাজের ভিত্তি।

রক্তদান কেন করবেন

নিয়মিত রক্ত দেওয়ার নিয়ম

১. বয়স ও ওজন: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, রক্তদাতা হতে হলে বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬০ বছর এবং ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি।

২. রক্তদানের ব্যবধান: বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তথ্যমতে, পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩ মাস পর পর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৪ মাস পর পর রক্ত দেওয়া নিরাপদ।

৩. রক্তের পরিমাণ: প্রতিবার প্রায় ৩৫০-৪৫০ মিলিলিটার রক্ত দেওয়া হয়, যা শরীর দ্রুত পূরণ করে ফেলে। এর বেশি দেওয়া নিরাপদ নয়

৪. খালি পেটে নয়: রক্তদানের আগে হালকা খাবার খাওয়া জরুরি। খালি পেটে রক্ত দিলে মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগতে পারে।

৫. পর্যাপ্ত পানি পান: রক্ত দেওয়ার আগে ও পরে পর্যাপ্ত পানি বা তরল পান করা উচিত, যাতে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।

৬. রোগ বা ওষুধের ইতিহাস জানান: যদি সাম্প্রতিক কোনো সংক্রমণ, সার্জারি, অ্যান্টিবায়োটিক সেবন বা জ্বর থাকলে চিকিৎসককে জানান।

৭. রক্তদানের পর বিশ্রাম: রক্ত দেওয়ার পর ১০-১৫ মিনিট বিশ্রাম নিন, ভারী কাজ বা ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।

৮. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: রক্তদানের আগে ও পরে অন্তত ১২ ঘণ্টা ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করা উচিত নয়।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মায়ো ক্লিনিক, হেলথলাইন

এএমপি/এমএস

Read Entire Article