‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় থমকে গেছে ডেনিম শিল্প, আছে মন্দার চাপও’

11 hours ago 7

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ডেনিম ও পোশাকশিল্প বর্তমানে মন্দার চাপের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এ খাতের সম্প্রসারণ কার্যত থমকে গেছে।

দেশের ডেনিম শিল্পের বিকাশে নিবেদিত বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৯তম আসর শুরু হয়েছে আজ বুধবার। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুদিনব্যাপী এ আয়োজন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

ডেনিম এক্সপোতে অংশ নেওয়া শিল্প সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক করনীতিগুলো বৈশ্বিক বাজারে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং চলমান সংকটকে ত্বরান্বিত করেছে।

রেসাস কেমির প্রতিনিধি সেকিপ হায়িত বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন দেশের সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক কারণ এ খাতকে আরও চাপে ফেলেছে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও এখন শিল্প ও বাণিজ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসা খাতের মূল প্রয়োজন এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। নির্বাচন দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সেকিপ হায়িত জানান, এবারের ডেনিম এক্সপোতে দেশীয় কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম, কারণ তারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, তাহলে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও দক্ষতা দিয়ে এই শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

সেকিপ আরও বলেন, ‘উচ্চশুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন এখন নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে তারা এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশ বাড়ানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই পরিবর্তিত বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে উৎপাদনকারীদের তাদের ব্যবসায়িক কৌশল নতুনভাবে সাজাতে হচ্ছে।’

বর্তমানে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করছে রেসাস কেমি। তাদের জামালপুরের নতুন কারখানাটি চালু হলে এই অঞ্চলে ব্যবসা আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে সামগ্রিক বাজার এখনো চাপের মধ্যে রয়েছে এবং সম্প্রসারণের কোনো গতি দেখা যাচ্ছে না। ভূরাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাও বাজারে প্রভাব ফেলছে। এবারের এক্সপোতেও দেখা গেছে, অনিশ্চয়তা ও আস্থার ঘাটতির কারণে উৎপাদনকারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম, বলে জানান তিনি।

তুরস্কের অন্যতম বৃহৎ সমন্বিত টেক্সটাইল কোম্পানি বোসা’র সেলস চিফ বি. হান্দে ইয়িলদিরিম বলেন, ‘আমরা ৭৪ বছর ধরে টেক্সটাইল খাতে কাজ করছি এবং গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য টেকসই উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া।’

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে প্রায় চার মিলিয়ন মিটার কাপড় উৎপাদন করে, যার মধ্যে প্রায় ৩ শতাংশ বাংলাদেশে রপ্তানি হয়। বাংলাদেশের বাজারকে সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন তিনি, তবে বৈশ্বিক ও স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ব্যবসা সম্প্রসারণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হান্দে ইয়িলদিরিম বলেন, ‘বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে মন্দা চলছে, ক্রেতাদের চাহিদা কমে গেছে এবং অনেক অর্ডার এখন মিশরে স্থানান্তরিত হচ্ছে। আমরা এখন মূলত ক্রেতার মনোনয়নের ভিত্তিতে ব্যবসা করছি। যদি ক্রেতারা বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে এখানে আরও বড় পরিসরে ব্যবসা করা সম্ভব।’

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুল্কের হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও এটি ব্যবসায়িকভাবে অনুকূল নয় এবং বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘২০২৬ সাল আমাদের জন্য ভালো হতে পারে, যদি বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে এখানে ব্যবসা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।’

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পকে বৈশ্বিক ক্রেতা ও ভোক্তাদের কাছে আরও শক্তভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ডেনিম শিল্প মানসম্মত পণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ভোক্তাদের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শিল্পটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এর ফলে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডারও তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।’

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, তাহলে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকেই শিল্পটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আমি আশাবাদী, বাংলাদেশের ডেনিম খাত আবারও তার শক্ত অবস্থান ফিরে পাবে।’

এ বছর প্রদর্শনীতে ১০টি দেশ থেকে ৪৫টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিষ্ঠানগুলো ডেনিম ও নন-ডেনিম ফ্যাব্রিক, গার্মেন্টস, সুতা, ওয়াশিং ও লন্ড্রি, অ্যাকসেসরিজ, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি এবং লজিস্টিকস ক্যাটাগরিতে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে।

আইএইচও/বিএ/এএসএম

Read Entire Article