রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বোর্ডে পদত্যাগের হিড়িক

4 hours ago 7

#চেয়ারম্যানের একতরফা সিদ্ধান্তে ক্ষোভ
# নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাডহক ম্যানেজিং বোর্ডে একের পর এক পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে। বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলামের পর এবার পদত্যাগপত্র দিয়েছেন সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন ও ডা. মাহমুদা আলম মিতু। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) তারা তিনজনই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো পৃথক চিঠিতে বোর্ডের অনিয়ম, স্বচ্ছতার অভাব এবং চেয়ারম্যানের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পদত্যাগের তথ্য নিশ্চিত করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বোর্ডের চেয়ারম্যান কোনো মিটিং ছাড়াই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন। যেগুলোতে বোর্ডের সিদ্ধান্তকেও লঙ্ঘন করেছেন। সেগুলো আমাকে আহত করেছে। যেখানে থাকলে আমি ভ্যালু এড করতে পারবো না। সেখানে থেকে তো লাভ নেই। এজন্য আমি পদত্যাগ করেছি।

বোর্ডের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন বলেন, আমি পদত্যাগ করেছি। ইতোমধ্যে কয়েকজন করেছেন, আরও কয়েকজন করবেন। কারণ, বোর্ডের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান ও তার অনুগত দু-একজন পরিচালক আদেশ জারি করেছেন, যেটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত পরিপন্থি। তারা বোর্ডের শৃঙ্খলা অনুসরণ করছেন না।

আরেক সদস্য ডা. মাহমুদা আলম মিতু তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, বোর্ডের মেয়াদ ১১ সেপ্টেম্বর তিন মাস বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইউনিট ও কেন্দ্রীয় নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই। বরং বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন আয়োজন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি জেনারেল বোর্ডের গৃহীত সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে নীতিগত পরিবর্তন আনছেন, যা সোসাইটির নিয়মবহির্ভূত।

ডা. মিতু তার চিঠিতে লিখেছেন, বোর্ড গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিষ্ঠানটির সুশাসন ও জবাবদিহিতা পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু বাস্তবে সেটি ব্যাহত হচ্ছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘রেড ক্রিসেন্টের সুনাম ও স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য আমরা একাধিক প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো ধারাবাহিকভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। বোর্ড কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।’

বোর্ডের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচনের নিয়মে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন, যাতে বিতর্কিত ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারেন।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বর্তমান অ্যাডহক ম্যানেজিং বোর্ডটি পুনর্গঠিত হয় গত ৫ মার্চ। তিন মাসের মেয়াদ শেষে সেপ্টেম্বর মাসে তা আরও তিন মাসের জন্য বাড়ানো হয়, শর্ত ছিল ইউনিট পর্যায়ের নির্বাচন সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় বোর্ডের নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হতে আর কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকতেই একে একে সদস্যরা পদত্যাগপত্র দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অনিয়মে জর্জরিত। দুর্যোগকালে মানবিক সহায়তার জন্য পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বারের মতো নতুন বোর্ড গঠনের পর থেকেই সংকট গভীর হয়। বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ, নারী নির্যাতনের শাস্তি বাতিল, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল, রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি ও বদলি, এমনকি নিয়মবহির্ভূত নিয়োগসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে দমননীতি গ্রহণ করা হয়, যার ফলে অক্টোবরে টানা এক সপ্তাহ তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে। আন্দোলন দমন হলেও ভেতরে রয়ে গেছে তীব্র ক্ষোভ। এছাড়া বোর্ডের সদস্যদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বোর্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে নীতিমালা পরিবর্তন করছেন, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয় এবং বিতর্কিত ব্যক্তিরা সুবিধা পান। ফলে, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বর্তমানে স্থবির হয়ে পড়েছে-অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, অনিয়ম ও নেতৃত্ব সংকটে প্রতিষ্ঠানটির সেবা কার্যক্রম কার্যত ভেঙে পড়েছে।

এ নিয়ে গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) ‌‘একের পর এক অনিয়মে জর্জরিত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’ শিরোনামের সংবাদ প্রকাশ করে জাগো নিউজ। তার একদিন পরই এই পদত্যাগের হিড়িক।

এসইউজে/জেএইচ

Read Entire Article