জাস্টিস ফর অল-এর বার্মা টাস্ক ফোর্স নেতৃত্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল ঢাকার গোল্ডেন টিউলিপ - দ্য গ্র্যান্ডমার্ক হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য একটি সুসংহত, স্বীকৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা কাঠামো গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
বক্তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের চলমান চ্যালেঞ্জগুলো এবং শিক্ষার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। মূল বক্তব্য দেন নাদিন মাঞ্জা, সাবেক চেয়ার, মার্কিন যুক্তরোষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (USCIRF), কো-চেয়ার ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম রাউন্ডটেবিল (ওয়াশিংটন, ডিসি) ও চেয়ার, ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল এনগেজমেন্ট (IGE); রিচার্ড রিওচ, চেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ওয়াকিং গ্রপ অন শ্রীলঙ্কা, সাবেক মুখপাত্র, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বৌদ্ধ হিউম্যানিটারিয়ান প্রজেক্ট; সামীর হোসেন, প্রতিষ্ঠাতা, পাথফাউন্ডার পলিসি স্ট্র্যাটেজিস (ওয়াশিংটন, ডিসি), সাবেক নীতিনির্ধারণ পরামর্শক, হোয়াইট হাউস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (রোহিঙ্গা ও উইঘুর সংকট বিষয়ে); ইমাম আব্দুল মালিক মুজাহিদ, চেয়ার, বার্মা টাস্ক ফোর্স ইউএসএ, প্রেসিডেন্ট, জাস্টিস ফর অল (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা), পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও প্রযোজক প্রতিষ্ঠাতা, মুসলিম নেটওয়ার্ক টিভি।
এই প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে বহু বছরের গবেষণা ও সাম্প্রতিক মাঠ পরিদর্শনের ভিত্তিতে তাদের মূল সুপারিশ উপস্থাপন করে। তারা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক স্মারকলিপিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ওপর জোর দেয় :
১. রোহিঙ্গা শিক্ষার জন্য একটি একীভূত জাতীয় নীতিমালা নির্দেশনা জারি করা;
২. একটি স্বীকৃত সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যা উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত করবে;
৩. মার্কিন মুসলিম ত্রাণ সংস্থাগুলোকে শিক্ষা উদ্যোগে অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া, যাতে বিপুল পরিমাণ দাতব্য সম্পদ ও দক্ষতা কাজে লাগানো যায়।
“বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে পরিমাণ সহানুভূতি দেখিয়েছে, তা বিশ্বের আর কোনো দেশ দেখায়নি,” বলেন ইমাম আবদুল মালিক মুজাহিদ, জাস্টিস ফর অল-এর সভাপতি ও বার্মা টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান। “এখন সময় এসেছে পরবর্তী সেতু নির্মাণের— শিক্ষা। একটি সুসংহত ও স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যেন রোহিঙ্গা শিশু, বিশেষ করে মেয়েরা, তাদের ভবিষ্যৎ থেকে বঞ্চিত না হয়।”
প্রতিনিধিদলের অনুসন্ধান ১,০০০ রোহিঙ্গা নারীর ওপর করা জরিপ, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসকদের সঙ্গে বিস্তৃত পরামর্শ এবং একাধিক শিবিরে স্কুল পরিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে। গবেষণায় দেখা যায়, রোহিঙ্গা স্কুল-যুগের জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ নারী হলেও তাদের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত।
“কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আমার সফরের সময় আমি এমন পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেছি যারা জানে, শিক্ষাই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি,” বলেন নাদিন মানজা, যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (USCIRF)-এর সাবেক চেয়ার। “বাংলাদেশের জন্য শিবিরে শিক্ষা প্রদান কেবল মানবিকতার কাজ নয়— এটি একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। অশিক্ষিত প্রজন্ম নির্ভরতা ও অনিরাপত্তা বাড়াবে, কিন্তু শিক্ষিত প্রজন্ম শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উভয় দেশের (বাংলাদেশ ও বার্মা) জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে অবদান রাখতে পারে।”
“শিক্ষা হলো গণহত্যার ভয়াবহতার মধ্যে বন্দি তরুণদের পুনরুদ্ধারের জীবনরক্ষাকারী পথ,” বলেন প্রতিনিধিদলের সদস্য রিচার্ড রিওচ, যিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর সাবেক মুখপাত্র। “যেভাবে তাদের খাদ্য ও পানির প্রয়োজন, ঠিক তেমনই প্রয়োজন শিক্ষা থেকে পাওয়া মানসিক যত্ন ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ। আমরা এ শিক্ষা বিশ্বজুড়ে অর্জন করেছি— শিক্ষাই তাদের নতুন জীবনের পাসপোর্ট। রোহিঙ্গা শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিবেদন আমাদের দেখিয়েছে, তাদের সন্তানদের শিক্ষার প্রতি অঙ্গীকারই সেই দৃঢ় মনোবলের প্রতিফলন, যা গণহত্যাও নিভিয়ে দিতে পারেনি।”
প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানায়, বিশেষ করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (RRRC) দপ্তরকে, উন্মুক্ত সংলাপ ও মাঠপরিদর্শনে সহায়তার জন্য। তারা কমিশনার মিজানুর রহমানের প্রশংসা করেন, যিনি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা, জাতিসংঘ সংস্থা ও এনজিওগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের নতুন পথ অনুসন্ধানে।
ইমাম মুজাহিদ বলেন, “জাস্টিস ফর অল প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বার্ষিক দানশীলতা রোহিঙ্গা শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে কাজে লাগে এবং কোনো শিশুই যেন পিছিয়ে না থাকে।”
জাস্টিস ফর অল – বার্মা টাস্ক ফোর্স সম্পর্কে
জাস্টিস ফর অল একটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা, যা বিশ্বব্যাপী সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে। এর বার্মা টাস্ক ফোর্স রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য নীতি প্রভাব, আইনগত জবাবদিহিতা এবং মানবিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করে। গত এক দশকে সংস্থাটি কংগ্রেসে নীতি প্রচার, আইসিসিতে (ICC) মামলা উপস্থাপন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণহত্যা বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় প্রচারণা চালিয়েছে।
আমেরিকান মুসলমানদের সম্পর্কে
আমেরিকায় প্রায় ৫০ লাখ মুসলমান বাস করেন। তাদের রয়েছে ৩,০০০-এর বেশি মসজিদ এবং ৫০০-এর বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারা প্রতি বছর জাকাত ও সদকার মাধ্যমে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার দান করেন।

5 hours ago
4









English (US) ·