অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ার সাগরে মারা গেছেন মাদারীপুরের দুই যুবক। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমেই দুই যুবকের মৃত্যুর খবর জানতে পারে নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
নিহতরা হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চর বাজিতপুর গ্রামের লাল মিয়া বেপারীর ছেলে জাফর বেপারী (৪৫), একই গ্রামের হামেদ আলী হাওলাদারের ছেলে সিরাজুল হাওলাদার (২৫)।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর উন্নত জীবনের আশায় অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন জাফর বেপারী ও সিরাজুল হাওলাদার। কয়েকটি দেশ ঘুরে লিবিয়ায় যান তারা। পরে লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমে ১৪ অক্টোবর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ওঠেন জাফর, সিরাজুল হাওলাদারসহ অর্ধশত যুবক। তাদের নৌকাটি মধ্য সাগরে গেলে তেল শেষ হয়ে যায়। পরে নৌকাটি ভাসতে থাকে সাগরে। এক সপ্তাহ ভাসমান থাকার পর তীব্র শীতে সাগরেই মারা যান জাফর ও সিরাজুলসহ বেশ কয়েকজন যুবক। প্রথমে বিষয়টি দালালচক্র গোপন রাখেন। পরে ব্যাপারটি জানাজানি হয়। এরপর মঙ্গলবার রাতে লিবিয়ার দালালদের মাধ্যমেই তাদের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
পারিবার সূত্রে আরও জানা গেছে, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য চর বাজিতপুর গ্রামের চান্দু সরদারের ছেলে লোকমান সরদার প্রলোভন দেখিয়ে দুটি পরিবারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেন। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দালাল চক্র তা করেনি। কয়েক মাস আগে দালাল লোকমানের দুই ছেলে সুজন ও সুমন অবৈধভাবে ইতালি যান। এরপর থেকে তিনি এলাকার মানুষকে খুব সহজে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখায়। আর এতে করে অনেকেই এই ফাঁদে পা বাড়ান।

নিহত জাফরের বাবা লাল মিয়া বেপারী বলেন, জাফরের এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। দালাল লোকমান একসঙ্গে আমাদের পরিবার থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। তখন দালাল বলেছিলেন কোনো ঝুঁকি ছাড়াই জাফরকে ইতালি পৌঁছে দিবেন। কিন্তু সাগরেই মৃত্যু হলো আমার ছেলে জাফর আর ওর সঙ্গে থাকা সিরাজুলের। এই ঘটনায় জড়িত লোকমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
অভিযুক্ত দালাল লোকমানের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার বলেন, আমার ভাসুর কোনো দালাল নন। তার দুই ছেলে ইতালি যাওয়ার পর এলাকার অনেকেই তার কাছে আসেন। এতে তার কোনো দোষ নেই। অন্য এক বড় দালাল আছেন, তিনিই সব জানেন। তার পরিচয় আমরা জানি না। তবে লোকমান ভাই জানেন।
এদিকে নিহতের ঘটনা জানান পর চান্দু সরদারের ছেলে লোকমান সরদার পালিয়েছেন।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ইতালি যাওয়ার পথে লিবিয়ায় দুই যুবকের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি। তবে এখনও পরিবার থেকে কেউ অভিযোগ দেয়নি। এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এনএইচআর/এমএস

2 hours ago
6








English (US) ·