উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লিবিয়া এমন এক ট্রানজিট দেশ যেখানে অভিবাসীরা ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের’ মুখোমুখি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বা আইওএম-এর মহাপরিচালক অ্যামি পোপ।
২৪ অক্টোবর বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। মরক্কোর রাজধানী রাবাতে তিনি এএফপিকে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেছেন, সুদানের যুদ্ধের কারণে পুরো অঞ্চলে শরণার্থীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
অ্যামি পোপ বলেন, আমরা নিয়মিত এমন অভিবাসীদের কাছ থেকে তথ্য পাচ্ছি যারা অপহৃত হয়েছেন, মুক্তিপণ দাবিতে আটক ছিলেন অথবা সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
লিবিয়ায় বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ লাখ বিদেশি রয়েছেন যারা চলতি গ্রীষ্মে ‘অবৈধভাবে প্রবেশ’ করেছেন বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ২০১১ সালে সাবেক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন ও মৃত্যুর পর দেশটিতে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার সুযোগে সক্রিয় হয়ে ওঠে পাচারকারী ও মানবপাচার চক্রগুলো।
অ্যামি পোপের ভাষায়, এখন লিবিয়া হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর আশায় যারা আসছেন, তাদের মধ্যে এশীয় নাগরিকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা আসছেন বড় সংখ্যায়। তারা সাধারণত উপসাগরীয় দেশগুলো হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান।
আইওএম-এর তথ্যে আরও বলা হয়েছে, সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও সুদান থেকেও লিবিয়ায় আগমন বেড়েছে। এপ্রিল ২০২৩ সালে সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে সহিংসতা চলছেই।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, ওই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজারেরও বেশি সুদানি শরণার্থী লিবিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। এতে আগেই থাকা শত-সহস্র অভিবাসীর সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে।
‘সীমিত সক্ষমতা, কমছে সহায়তা’
অ্যামি পোপ বলেন, এই যুদ্ধ পুরো অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতির স্থানান্তর ঘটাচ্ছে।
তার মতে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে কারণ প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন চাদ ও মিশর জাতিসংঘের বাজেট কমে যাওয়ার কারণে মানবিক সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
তবে কিছু সুদানি শরণার্থী দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে রাজধানী খার্তুমে, যেখানে নিরাপত্তা তুলনামূলকভাবে কিছুটা উন্নত হয়েছে এবং আইওএম তাদের অফিস পুনরায় চালু করেছে।
কিন্তু দেশটির দারফুর অঞ্চলে এখনও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে, তাই সেখানে ফেরা সম্ভব নয়।
‘অনেক অভিবাসী স্ফ্যাক্সে পৌঁছানোর সময় তাদের সমস্ত সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন। এই অবস্থায় আইওএম স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
অ্যামি পোপ বলেন, ‘পুরো অঞ্চলজুড়ে অভিবাসন চাপ আগের মতোই প্রবল। কিন্তু দেশগুলোর সক্ষমতা ও সহায়তা সীমিত। যা প্রায়ই অনিয়মিত অভিবাসন দমনের নামে শুধু নিরাপত্তামুখী ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধ থাকে।’
তিনি আহ্বান জানান, আমাদের এমন সমাধান দরকার, যা বৃহত্তর পরিসরে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, উৎস দেশের উন্নয়ন ও নিরাপদ, বৈধ অভিবাসনের পথ তৈরি করে।
এমআরএম/জিকেএস

1 week ago
12









English (US) ·