জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিবাদ বাঁধে প্রতীক ইস্যুতে। দলটি চায় শাপলা প্রতীক। তবে বিধিতে না থাকায় দলটিকে শাপলা প্রতীক দিতে অপারগতার কথা জানায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে নানা ঘটনার পর অবশেষে ইসির সংরক্ষিত নির্বাচনী প্রতীকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক। তবে এনসিপি প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ নেবে কি-না, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, এনসিপি নেতৃত্ব আলোচনা ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে অবস্থান নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) তালিকায় শাপলা কলি প্রতীক যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৯৭২ এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন, ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’-এর নিম্নরূপ অধিকতর সংশোধন করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, উপরিউক্ত বিধিমালার বিধি ৯ এর উপ-বিধি (১) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-বিধি (১) প্রতিস্থাপিত হবে। এ বিধির অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অনুচ্ছেদ ২০ এর দফার অধীন স্থগিত করা প্রতীক ব্যতীত নিম্নবর্ণিত প্রতীকগুলো হইতে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে।
গেজেট অনুযায়ী, আর্টিকেল ৯৪ এর ক্ষমতাবলে এবং ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’-এর আলোকে তফসিলভুক্ত প্রতীকের তালিকায় ১০২ নম্বরে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে। ‘শাপলা কলি’ ছাড়াও আরও তিনটি নতুন প্রতীক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে মোট প্রতীকের সংখ্যা এখন ১১৯টি।
তবে এনসিপি প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ নেবে কি-না, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে প্রতীক বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে ভিন্নমত তৈরি হওয়ায় এনসিপি নেতৃত্ব আলোচনা ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে অবস্থান নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলীয় নেতারা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রতীক ইস্যুটি এনসিপির সাংগঠনিক ঐক্য ও প্রচারণা কৌশলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ওপর জোর দিচ্ছে তারা।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের আট জেলা ও একটি মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বর্তমানে রংপুরে অবস্থান করছেন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লাতে অবস্থান করছেন। দলের শীর্ষ নেতারা ঢাকার বাইরে থাকায় এখনই প্রতীক ইস্যুতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দলের শীর্ষ নেতারা ঢাকায় ফিরলে দলীয় বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত জাগো নিউজকে বলেন, গেজেটে ‘শাপলা কলি’ অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে ইসি প্রমাণ করলো প্রতীক তালিকাভূক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। এতোদিন পর্যন্ত তথাকথিত আইনি প্রতিবন্ধতাসহ যেসব কেচ্ছা জাতিকে গেলানো হয়েছে, আমাদের অহেতুক একটা বিষয়ে ব্যস্ত রাখা হয়েছে ও দলীয় মার্কা নিয়ে প্রচারণা করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রাখা হয়েছে তার জবাব দিতে হবে ইসিকে। এই ইসি যে স্বেচ্ছাচারি ও পক্ষপাতদুষ্ট তা জাতির কাছে স্পষ্ট। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এই ইসি পুনর্গঠন করা উচিত।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন জাগো নিউজকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। শাপলা কলি বিষয়ে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেব। এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত হয়নি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, কীভাবে প্রতীকগুলো নির্বাচন কমিশন তার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আমরা এটি জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বলা হয় নাই। প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করলো কি করলো না সেটি বড় বিষয় নয়। এখানে বড় বিষয় কোন প্রক্রিয়ায় তারা প্রতীক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বিষয়টি তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে কি-না।
সামান্তা শারমিন আরও বলেন, আমাদের জানানো হয়েছিল শাপলা তালিকাযুক্ত করা যাবে না। এখন দেখছি তারা তালিকায় যুক্ত করেছে। তাহলে এতোদিন ধরে কেন এই পজিশন নেওয়া হলো। এগুলো সন্দেহজনক, নির্বাচন কমিশনের জায়গা থেকে এগুলো প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ। বোঝা যাচ্ছে না যে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবে কি-না।
এনসিপি শাপলা কলি প্রতীক নেবে কি-না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমাদের ফোরামে আলোচনা হচ্ছে, আমরা সিদ্ধান্ত জানাবো।
এনএস/এমএমকে/জিকেএস

2 days ago
10









English (US) ·