ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই গণহত্যার পক্ষে ভূমিকা নেওয়া ৩০ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্তের পর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ২৭১তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর বহিষ্কৃত শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন তাদের ঘনিষ্ঠ কিছু শিক্ষার্থী। এছাড়া তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শাস্তি নির্ধারণ কমিটি করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরদিন (১ নভেম্বর) দুপুরে আইন বিভাগের বহিষ্কৃত দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের পক্ষে প্রশাসন ভবন চত্বরে মানববন্ধন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা উপাচার্যের কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেন এবং শাস্তি প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
পরে মানববন্ধনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিভাগটির উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। ৪ আগস্ট যেসব শিক্ষক গণহত্যার পক্ষে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা জুলাইয়ে পক্ষে ছিলেন কিনা— জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শাহজাহান মণ্ডল ও রেবা মণ্ডল স্যার ৪ আগস্টের মিছিলে ছিলেন বলে তাদের জুলাই বিরোধী বলা হচ্ছে। অথচ বিভাগের এক জুলাই আন্দোলনকারী যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন তারা তাকে সহযোগিতা করেছেন সেটাকে তো আপনারা বিবেচনা করছেন না।

আপনারা কি তাহলে জুলাই বিরোধীদের বৈধতা দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নে তারা বলেন, ‘না, আমরা কোনো বৈধতা দিচ্ছি না। আমরা চাই, বিভাগের ক্ষতি না হোক। প্রশাসন চাইলে অন্য ক্যাটাগরিতে তাকে শাস্তি দিতে পারে।’
এসময় বিভাগটির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সজিব ইসলাম, নোমান আলী, মোয়াব্বেজ রহমান জিম, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মির্জা শাহরিয়ার, নাজমুল করিম অর্ণব, রিয়াদ হাসান রাব্বি ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ফজলে রাব্বিসহ প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, বহিষ্কৃত ফ্যাসিবাদী শিক্ষকরা নিজেদের রক্ষায় শিক্ষার্থীদের সুকৌশলে ব্যবহার করছেন। একইসঙ্গে বিভাগগুলোর সুবিধাভোগী কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী জটে পড়া, ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়াসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তির মাধ্যমে বিভাগীয় ব্যানারে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগ এখনো ফ্যাসিবাদী শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে সমালোচনা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ইংরেজি বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষকদের ঘনিষ্ঠ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাশরাফি জিম, ঔশিক আশরাফি ও তানজিলুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আল ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নুরে-ই-শাহজাদী, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের অলোক দেবনাথ ও রাজিয়া সুলতানাসহ কয়েকজন ওই বিভাগের বহিষ্কৃত শিক্ষকের পক্ষে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন বলেও সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরে আমরা আরও একটি কমিটি গঠন করবো। কাকে কতটুকু শাস্তি দেওয়া হবে তা কমিটি বিবেচনা করবে। ফ্যাসিস্টের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই।
গত বছরের ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে চলা আন্দোলনের বিরোধিতা করে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন ‘শাপলা ফোরাম’। এদিনের সমাবেশে আন্দোলনরত বিভাগগুলোর বহিষ্কৃত শিক্ষকদের মধ্যে আইন বিভাগের দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম. আক্তারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মিয়া রাসিদুজ্জামান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসানসহ অনেক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ওই সমাবেশে তারা শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে জুলাই আন্দোলনকারীদের নৈরাজ্যকারী হিসেবে আখ্যা দেন।
ইরফান উল্লাহ/আরএইচ/জেআইএম

15 hours ago
7









English (US) ·