লিউকেমিয়া হলো রক্তের ক্যান্সার। আমাদের হাড়ের ম্যারোতে রক্তের কোষ এবং প্লেটলেট তৈরি হয়। লিউকেমিয়ায় কিছু নতুন সাদা রক্তকোষ (WBC) ঠিকমত বড় হয় না। এই অম্যাচিউর (অসম্পূর্ণ) কোষগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, স্বাভাবিক কোষকে ঠেলে দেয় এবং নানা ধরনের উপসর্গ তৈরি করে।
লিউকেমিয়া হলো শিশুদের সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। প্রতি বছর শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৪ হাজার শিশু এ দ্বারা আক্রান্ত হয়।
শিশুদের লিউকেমিয়ার লক্ষণসমূহ
শিশুদের লিউকেমিয়ার সঠিক কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানা যায় না। তবে লক্ষণগুলো শিশুর ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। ক্রনিক লিউকেমিয়ার লক্ষণ ধীরে ধীরে দেখা দেয়; কিন্তু অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার লক্ষণ হঠাৎ প্রকাশ পেতে পারে। অনেক সময় এগুলো সাধারণ শিশুর অসুখের সঙ্গে মেলানো সহজ। শুধু কিছু লক্ষণ দেখা মানেই শিশুর লিউকেমিয়া আছে, এমন নয়।
শিশুদের লিউকেমিয়ার সাধারণ লক্ষণ
রক্ত পড়া এবং সোজা চোটে সহজে দাগ পড়া : লিউকেমিয়ার শিশুরা সাধারণত ছোট চোট বা নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পরও বেশি রক্তপাত করতে পারে। সহজে দাগ বা নীলচে দাগও হতে পারে। ছোট ছোট লাল দাগও দেখা দিতে পারে, যাকে পেটিচিয়া বলা হয়।
রক্ত জমে যাওয়ার ক্ষমতা স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর প্লেটলেটের ওপর নির্ভর করে। লিউকেমিয়ার শিশুর রক্ত পরীক্ষা করলে কম প্লেটলেট পাওয়া যায়।
পেট ব্যথা এবং খিদে কম থাকা : লিউকেমিয়ার শিশুরা পেট ব্যথা অনুভব করতে পারে। কারণ লিউকেমিয়ার কোষ স্লিপার, লিভার, কিডনিতে জমে এগুলো বড় হয়ে যেতে পারে। কখনো ডাক্তার বড় হওয়া অঙ্গগুলো স্পর্শ করতে পারেন। শিশুরা ঠিকমতো খেতে পারবে না বা খিদে কম থাকতে পারে। ওজন কমে যাওয়াও সাধারণ।
শ্বাসকষ্ট : লিউকেমিয়ার কোষ থাইমাস গ্রন্থির চারপাশে জমতে পারে, যা গলার নিচে থাকে। এতে শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। ফুসফুসের নোড ফুলে যাওয়াও শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। শিশুরা কাশিতে ভুগতে পারে বা শ্বাস কষ্ট পেতে পারে।
বারবার সংক্রমণ : সাদা রক্তকোষ সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে, কিন্তু লিউকেমিয়ার অম্যাচিউর কোষ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে শিশুরা বারবার ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। কাশি, জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া সাধারণ লক্ষণ। এমন সংক্রমণ প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কমে না।
ফোলা অংশ : লিম্ফ নোড রক্ত ছাঁকতে সাহায্য করে, কিন্তু লিউকেমিয়ার কোষ এতে জমে ফোলাভাব করতে পারে। সাধারণ স্থানগুলো হলো:
- বাহুর/ হাতের নিচে
- গলার পাশে
- কলারবোনের উপরে
- কমরের অংশে
কখনো কখনো থাইমাস ফোলা হলে মুখ, বাহু, ও উপরের বুকের রঙ নীলচে-লাল হয়ে যেতে পারে। মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা হতে পারে।
হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা : রক্ত হাড়ের ম্যারোতে তৈরি হয়। লিউকেমিয়ায় কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। কিছু শিশু নিচের পিঠে ব্যথা অনুভব করে, কেউ কেউ পায়ে ব্যথার কারণে হেঁটে সমস্যা অনুভব করতে পারে।
রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া) : লাল রক্তকোষ (RBC) শরীরে অক্সিজেন পৌঁছায়। কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধি রক্তাল্পতা তৈরি করে। লক্ষণ- ক্লান্তি, ফ্যাকাশে ত্বক, দ্রুত শ্বাস নেওয়া। কিছু শিশু দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা অনুভব করে।
লিউকেমিয়ার শিশুর ভবিষ্যৎ : শুধু কিছু লক্ষণ দেখা মানেই লিউকেমিয়ার প্রমাণ নয়। শিশুদের লিউকেমিয়ার বিভিন্ন ধরন আছে, এবং অনেক ফ্যাক্টর ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করে। সময়মতো সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসা ভালো ফলাফল আনতে সাহায্য করে।
কিছু লিউকেমিয়ার ধরনের বেঁচে থাকার হার সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। চিকিৎসা উন্নতির কারণে আজকের দিনে আক্রান্ত শিশুদের জন্য আশা আরও বেশি।
সূত্র: হেলথলাইন

16 hours ago
9









English (US) ·