বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে তাকে দেখা হয় আধুনিক যুগের ‘ফিনিশার’ হিসেবে—যিনি ইনিংসের শেষ দিকে নেমে বড় ছক্কা হাঁকাতে পারেন, দ্রুত রান তুলতে পারেন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, জাকের আলী অনিকের ব্যাটে সেই প্রতিশ্রুত ঝড়ের দেখা মিলছে না।
শেষ ১৫ ম্যাচে তিনি হাঁকিয়েছেন মাত্র ৩টি ছক্কা—যে সংখ্যাটি তাঁর তকমার সঙ্গে বেমানানভাবেই কম।
জাকেরের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল কোনো ইনিংস চোখে পড়ে না। গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট উভয়ই ছিল মাঝারি মানের। এ সময় তিনি একবারও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি; একমাত্র উজ্জ্বল ইনিংস ছিল ৪১ রানের অপরাজিত স্কোর, সেটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই ম্যাচের স্ট্রাইকরেটও আধুনিক ক্রিকেটের সাথে যায় না।
মজার ব্যাপার, এই ১৫ ম্যাচে ৪ ইনিংসে তিনি রইলেন ‘নট আউট’, কিন্তু দলের স্কোরবোর্ডে বড় কোনো পার্থক্য আনতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে এসেছে মোট ১৯০ রানের একটু বেশি, যার মধ্যে ১০-এর নিচে আউট হয়েছেন ৬ বার।
সংখ্যার আয়নায় জাকেরের শেষ ১৫ ম্যাচের পারফরম্যান্স
- মোট ম্যাচ: ১৫
- মোট ইনিংস: ১৩ (৪ নট আউট)
- মোট রান: ১৯০
- সর্বোচ্চ স্কোর: ৪১*
- মোট ছক্কা: ৩
- মোট চার: ১৬
- স্ট্রাইক রেট: গড়ে ১০০-এর নিচে
- পঞ্চাশ: ০
এই পরিসংখ্যান যে কোনো আধুনিক টি-টোয়েন্টি ফিনিশারের মানদণ্ডের তুলনায় অনেক নিচে। তাহলে জাকেরের‘ফিনিশার’ ভাবনার ভিত কোথায়?
জাকের আলী ঘরোয়া ক্রিকেটে ও বিপিএলে মাঝে মাঝে ঝলক দেখিয়েছিলেন—বিশেষ করে বড় শট মারার দক্ষতার জন্য। সেখান থেকেই জাতীয় দলের নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করেন তিনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বিশেষ করে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে, সেই একই আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাকেরের স্ট্রাইক রোটেশন ও শট নির্বাচনে সমস্যা স্পষ্ট। তাকে যদি শেষের দিকে নামানো হয়, তখন তিনি শট খেলতে গিয়ে ডট দেন এবং পরে চাপ নিতে না পেরে সহজেই আউট হয়ে যান।
বাংলাদেশ দল বর্তমানে ‘ডেথ ওভারে’ রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। সাইফ ও তানজিদরা শুরুর দিকটা সামাল দিলেও শেষ পাঁচ ওভারে গতি আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন জাকের বা অন্যান্য মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। এতে দলের মোট স্কোর বারবার থেমে যাচ্ছে ।
একজন নির্ভরযোগ্য ফিনিশারের অভাব বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সেটআপের দীর্ঘদিনের সমস্যা। আর জাকেরের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে—এই সমস্যা এখনো রয়ে গেছে আগের মতোই।
একজন ফিনিশারের কাছ থেকে প্রত্যাশা থাকে ১৫–২০ বলে দ্রুত ৩০–৪০ রানের ঝড় তোলা, ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেওয়া। কিন্তু জাকেরের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তেমন কোনো আভাস দেয় না।
প্রশ্ন এখন একটাই—যিনি পরিচয়ে ‘ফিনিশার’, তাঁর ব্যাটে যদি ১৫ ম্যাচে মাত্র ৩টি ছক্কা হয়, তবে সেই তকমা কতটা ন্যায্য?

6 hours ago
5









English (US) ·