সন্তানকে একলা থাকার সুযোগ দিতে হবে যে কারণে

4 hours ago 4

অনেক বাবা-মা মনে করেন, সন্তান যেন এক মুহূর্তও একা না থাকে। কেউ তাকে সারাক্ষণ সঙ্গ দিক, খেলুক, কিছু শেখাক বা শিশু ব্যস্ত থাকুক — এটাই যেন ভালো অভিভাবকের পরিচয়। কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলছে, একলা সময় কাটানোও শিশুর মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

একা থাকা মানে একাকিত্ব নয়

শিশুকে একা থাকতে দেওয়া মানে তাকে অবহেলা করা নয়। বরং এটি শেখার ও চিন্তার সময়। জার্নাল অব চাইল্ড সাইকোলজি অ্যান্ড সাইকিয়াট্রির এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু একা খেলতে বা নিজের মতো সময় কাটাতে পারে, তাদের সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস তুলনামূলকভাবে বেশি।

একলা সময় কাটালে শিশু নিজেই নিজের অনুভূতি বুঝতে শেখে। এতে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়।

শিশু সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকার ফল বিপরীত হতে পারে

সন্তানকে একলা থাকার সুযোগ দিতে হবে যে কারণে

আজকাল অনেক শিশু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্লাস, কোচিং ও অনলাইন কার্যক্রমে জড়িয়ে থাকে। এতে মানসিক ক্লান্তি তৈরি হয়, ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়, এমনকি উদ্বেগও বাড়ে।

মনোবিদদের মতে, শিশুর সময়সূচিতে কিছুটা ফাঁকা সময় থাকা উচিত, যাতে সে নিজের মতো করে ভাবতে, আঁকতে, গল্প বানাতে ও বিশ্রাম নিতে পারে।

একলা সময় কাটানো শেখানোর উপায়

১. ছোট অভ্যাস দিয়ে শুরু করুন: বয়স অনুযায়ী সন্তানকে দিনে ১০–১৫ মিনিট নিজের মতো খেলার সময় দিন।

২. ডিভাইস নয়, বাস্তব জগতে: ট্যাব বা ফোনের বদলে বই, রং, পাজল বা সাধারণ খেলনা নিয়ে শিশুকে সময় কাটাতে দিন।

৩. নিরাপদ পরিবেশ দিন: শিশুকে জানিয়ে দিন, আপনি আশেপাশেই আছেন, প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। তাহলে সে নিশ্চিন্তে নিজের মতো থাকার আত্মবিশ্বাস পাবে।

৪. একা থাকা নিয়ে ভয় তৈরি করবেন না: ‘তুমি একা খেলছো কেন?’ - এমন মন্তব্য করলে শিশু মনে করবে একা খেলা করা একটি অনুচিত কাজ। এমনটা না বলে তাকে নিজের মতো থাকতে উৎসাহ দিন।

সন্তানকে একলা থাকার সুযোগ দিতে হবে যে কারণে

৫. নিজের উদাহরণ দিন: আপনি নিজেও যদি কিছুটা সময় একা কাটান, যেমন বই পড়া, গান শোনা, বা হাঁটা, তাহলে শিশু সেটাকে স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে দেখবে।

কেন এটা জরুরি

যে শিশু নিজে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে জানে, সে বড় হয়ে আত্মবিশ্বাসী ও আবেগে স্থিতিশীল হয়। জীবনের চাপ, একাকিত্ব বা ব্যর্থতার সময়ও সে সহজে মানিয়ে নিতে পারে।

তাই সন্তানকে সারাক্ষণ ‘ব্যস্ত’ রাখার চেয়ে, মাঝে মাঝে একা থাকতে শেখান। কারণ, সেখান থেকে তৈরি হবে আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাস, চিন্তাশীলতা ও মানসিক দৃঢ়তা।

সূত্র: জার্নাল অব চাইল্ড সাইকোলজি অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি (২০২১), আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন

এএমপি/জিকেএস

Read Entire Article