বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির দাবিতে লালমনিরহাটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একইসঙ্গে ঢাকায় সহকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে জেলার শিক্ষকরা একযোগে এই কর্মসূচি পালন করছেন।
কর্মবিরতির ফলে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও ক্লাস না হওয়ায় অলস সময় পার করে। সামনে বৃত্তি ও বার্ষিক পরীক্ষা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

রোববার সকালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১৪৯টি বিদ্যালয়ের একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও তারা অফিস কক্ষে একত্রিত হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। কোনো শিক্ষকই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে যাননি।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকলেও শিক্ষক না থাকায় তারা নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছে। অনেককে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খেলাধুলা করতে বা ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। কোনো ক্লাস না হওয়ায় স্কুল টাইম শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা।

কথা হয় সদর উপজেলার বত্রিশ হাজারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী অঞ্জলির সঙ্গে। সে বলে, ‘সকাল ৯টায় স্কুলে এসেছি। কোনো স্যার-ম্যাডাম ক্লাসে আসেননি। আমরা যার যারমতো পড়ছি, খেলছি। কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। পরে জানতে পারলাম, ঢাকায় শিক্ষকদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। তাই তারা ধর্মঘট করছেন।’
একই উদ্বেগের কথা জানায় খোর্দ্দ সাপটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মমু আক্তার। সে বলে, ‘স্যার-ম্যাডামরা আন্দোলন করছেন, তাই সকাল থেকে ক্লাস হচ্ছে না। অথচ সামনে আমাদের বৃত্তি ও বার্ষিক পরীক্ষা। এসময় ক্লাস না হলে আমাদের পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হবে।’
শিক্ষকরা বলছেন, তাদের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার প্রতিবাদে তারা এই কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন
প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা
সাউন্ড গ্রেনেড-জলকামানে ছত্রভঙ্গ নন-এমপিও শিক্ষকরা
শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে, ক্লাসের বাইরে প্রাথমিকের ১ কোটি শিক্ষার্থী
বত্রিশ হাজারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারহানা হাসান দিঘী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় সহকর্মীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। সেখানে পুলিশ অমানবিক হামলা চালিয়েছে। সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষকদের নির্যাতন করেছে। এর প্রতিবাদে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো।’
খোর্দ্দ সাপটানা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামীমা ইয়াসমিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আশ্বাস দেওয়া হলেও আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে কোনো কার্যক্রম আজ পর্যন্ত হয়নি। গতকাল ঢাকার শহীদ মিনারে আমাদের সহকর্মীদের ওপর পুলিশ যেভাবে নির্যাতন চালিয়েছে, তার প্রতিবাদেই এই কর্মবিরতি। দাবি আদায় এবং হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।’
তবে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। কর্মবিরতিতে থাকা শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সদর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সদরের ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেই শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনো সহকারী শিক্ষককে নৈমিত্তিক ছুটি না দেওয়ার জন্য। যারা কর্মবিরতি পালন করছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে।’

জেলার বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চললেও কিছু প্রতিষ্ঠানে পাঠদান সচল রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এতে বাচ্চাদের শিক্ষা চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়েছি, লালমনিরহাট থেকে কোনো শিক্ষক ঢাকার আন্দোলনে যোগ দেননি। যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি করছেন, আমরা তাদের তথ্য বিভাগীয় অফিসে পাঠাচ্ছি। সেখান থেকেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসআর/জিকেএস

23 hours ago
4









English (US) ·