জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে আরও ২০টি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ, এলসি সুবিধা গ্রহণে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে এসব মামলা করা হবে। নতুন মামলাগুলোতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছাড়াও তার ছেলে সায়ান ফজলুর রহমান, ভাই সোহেল ফশিউর রহমান (এ এস এফ রহমান), তার ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান এবং জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস ছালামসহ প্রায় ৬০০ জন আসামি হতে পারেন।

এর আগে, গত ৩ নভেম্বর জনতা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করে দুদক।
আরও পড়ুন
শেয়ারবাজার ও ঋণ জালিয়াতি: সালমান এফ রহমানসহ ৩৪ জনের নামে মামলা
সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে অর্থ আত্মসাৎ, আইওএফের ১২ জনের জামিন
নতুন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো সালমান-আনিসুল-আতিককে
সালমান এফ রহমানসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে বিটিআরসির মামলা
এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আরও তিনটি মামলা করে দুদক, যেখানে সালমান এফ রহমানও আসামি। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বেক্সিমকো গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করে।

দুদকের নথি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা নিতে বেক্সিমকো গ্রুপ ২৫টি কাগুজে কোম্পানি গঠন করে। এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।
এছাড়া দুবাইভিত্তিক ‘আর আর গ্লোবাল এফ জেড ই’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করে। ওই অর্ডারের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির অজুহাতে ব্যাংক থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা নিয়ে ঋণ সংগ্রহ করা হয়। এভাবে ২৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

দুদক বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম আলাদা হলেও সবগুলোই মূলত বেক্সিমকো গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানি। ‘আর আর গ্লোবাল এফ জেড ই’ ও বেক্সিমকোর মালিক পরিবারের সদস্যদের— সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়ান ফজলুর রহমান এবং ভাই সোহেল ফশিউর রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন।
আরও পড়ুন
আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত নিয়ে ফোন করেছিলেন সালমান এফ রহমান
দুর্নীতির চার মামলায় গ্রেফতার সালমান এফ রহমান
সালমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা, পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
এবার দুদকের মামলায় গ্রেফতার সালমান এফ রহমান

চলতি বছর সরকার ১১টি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে, যেগুলো ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের পাশাপাশি ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর দুর্নীতি, অর্থপাচার, ঘুস, জালিয়াতি ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করছে। এই টাস্কফোর্সের অধীনেই চলছে বেক্সিমকো গ্রুপের অনুসন্ধান। এই তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুদক, সহায়তায় সিআইডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর তদন্তের সমন্বয় করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
দুদকের প্রতিরোধ শাখার মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে দুদকের চলমান অনুসন্ধান অন্য কোনো মামলার মতোই নিয়মিত প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে। যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সেই অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড, অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেড, কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড, প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে ও পুত্রবধূর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
আরও পড়ুন
দুই মামলায় সালমান এফ রহমান ও তার ছেলেসহ আসামি ১৯ জন
বেক্সিমকো চলবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়, থাকছে না রিসিভার
সালমান এফ রহমানের বিদেশের সম্পদ জব্দ, কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ
স্ত্রী-ছেলেসহ সালমান এফ রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গত বছরের ২২ আগস্ট বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয় এনবিআর। এর আগে ১৩ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট থেকে সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতারের কথা জানায় পুলিশ।
এসএম/এমএমএআর/এমএফএ/এএসএম

7 hours ago
6








English (US) ·