অনেকে একা বা সিঙ্গেল থাকার বিষয়টি নিয়ে দুঃখ পান, এটাকে দুর্বলতা মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে একা থাকা মানেই কষ্টে থাকা নয়। বরং এটা এমন এক সময়, যখন আপনি পুরোপুরি নিজের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।
১১ নভেম্বর, আজকের এই তারিখটি সিঙ্গেল মানুষদের জন্য বিশেষ একটি দিন। কারণ আজকে ‘সিঙ্গেলস ডে’। চীনে শুরু হওয়া এই সিঙ্গেলস ডে আজ বিশ্বের বহু দেশে পালিত হয় আত্মপ্রেম ও ব্যক্তিস্বাধীনতার উৎসব হিসেবে।
এই দিবসটির পেছনে আছে মজার এক গল্প। ১৯৯০–এর দশকে চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটির চারজন সিঙ্গেল ছাত্র মজার ছলে একদিন ঠিক করেন যে, যেহেতু আমরা সিঙ্গেল, তাই আমাদেরও একটা দিন থাকা উচিত!
সেই দিবস হিসেবে তারা বেছে নিলেন ১১ নভেম্বর—কারণ এই তারিখে চারটি ‘১’ আছে। প্রথমদিকে দিনটির নাম ছিল ব্যাচেলরস ডে, কারণ এটি মূলত পুরুষ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণা ছড়িয়ে পড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও, পরে পুরো চীনের সংস্কৃতিতেই মিশে যায়। এখন এটি শুধু ছেলেদের নয়—মেয়েরাও সমানভাবে উদযাপন করে।
দিনটি এখন শুধুই বন্ধুত্ব, মজা আর একসঙ্গে সময় কাটানোর নয় — বরং চীনে এটি অন্যতম বড় কেনাকাটার দিবসেও পরিণত হয়েছে। চীনে এই দিনটি উদযাপন করা হয় একক মানুষদের সম্মান জানাতে—তাদের আত্মসম্মান, আত্মপ্রেম ও জীবনদর্শনকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরতে। এখন এই উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা দেশে। সেই সঙ্গে মানুষের একা থাকার ইতিবাচক দিকগুলোও সামনে নিয়ে এসেছে।
সিঙ্গেল থাকা সবসময় একাকীত্ব নয়
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, একা থাকা মানেই একাকী হওয়া নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব পজিটিভ সাইকোলজির এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে একা থাকেন, তাদের মধ্যে আত্মপর্যালোচনা ও মানসিক স্থিতিশীলতা বেশি থাকে। সম্পর্কের চাপ থেকে মুক্ত থেকে তারা নিজেদের লক্ষ্য, কাজ ও আগ্রহে মনোযোগ দিতে পারেন।
নিজের সময়ের আনন্দ
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে নিজের জন্য সময় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। অথচ একা থাকার সময়টুকু নিজেকে জানার, বিশ্রাম নেওয়ার ও মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়। ধীরে ধীরে আপনি বুঝতে শিখবেন—আনন্দ অন্যের উপস্থিতিতে নয়, নিজের পরিপূর্ণতায়ও লুকিয়ে থাকে।
সমাজের চাপ নয়, আত্মবিশ্বাসে বাঁচা
আমাদের সমাজে ‘তুমি এখনো সিঙ্গেল?’ প্রশ্নটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হার্ভার্ড হিউম্যান ফ্লরিশিং প্রোগ্রামের ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা নিজেদের একক জীবনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মান অনেক বেশি।
নিজের প্রতি ভালোবাসাই মূল চাবিকাঠি
সিঙ্গেলস ডে আসলে একধরনের স্মরণদিবস—নিজের প্রতি ভালোবাসা, যত্ন ও সম্মান দেখানোর দিন। নিজের পছন্দের খাবার খাওয়া, সিনেমা দেখা, বা কেবল এক কাপ চা হাতে কিছুক্ষণ নিরব থাকা—এই সবই হতে পারে আত্মতৃপ্তির মুহূর্ত।
সূত্র: জার্নাল অব পজিটিভ সাইকোলজি, হার্ভার্ড হিউম্যান ফ্লরিশিং প্রোগ্রাম, ডেইজ অব দ্য ইয়ার
এএমপি/জিকেএস

2 days ago
7








English (US) ·