সুদানে ‘গণহত্যা’র তথ্য লুকাতে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলছে আরএসএফ

3 hours ago 5

সুদানে ‘গণহত্যা’র তথ্য লুকাতে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। দেশটির একটি চিকিৎসা সংস্থা দারফুরে গণহত্যার প্রমাণ গোপন করার জন্য মৃতদেহ পুড়িয়ে বা গণকবরে পুঁতে ফেলার ‘মরিয়া প্রচেষ্টা’ করছে বলে আরএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। খবর আল জাজিরার। 

সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক রোববার জানিয়েছে, গত ২৬ অক্টোবর রক্তাক্ত হামলার পর শহর দখলের পর আধাসামরিক বাহিনী সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশেরের রাস্তা থেকে ‘শত শত মৃতদেহ’ তুলে নিয়ে গেছে। সংস্থাটি বলছে, সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর অপরাধ গোপন বা পুড়িয়ে মুছে ফেলা যাবে না।

এল-ফাশেরে যা ঘটেছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং আরএসএফের একটি পূর্ণাঙ্গ গণহত্যার আরেকটি অধ্যায়। মৃতদেহ বিকৃত করা, পুড়িয়ে ফেলা বা গণকবর দেওয়া আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ধারণা, আরএসএফ এই অঞ্চলের শেষ সুদানি সামরিক ঘাঁটিটি দখল করার পর, এল-ফাশেরে আড়াই লাখের বেশি জনসংখ্যার মধ্যে ৮২ হাজার মানুষই পালিয়ে গেছে। সেখানে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। অনেক বাসিন্দা এখনও আটকা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে আল জাজিরার হিবা মরগান জানিয়েছেন, আল-ফাশের থেকে উত্তরে আল দাব্বার উদ্দেশ্যে পালিয়ে আসা অনেক লোক রাস্তায় মারা গেছে। কারণ, তাদের কাছে খাবার বা পানি ছিল না, অথবা গুলিবর্ষণের কারণে তারা আহত হয়েছিল।

মরগান বলেছেন যে, পালিয়ে আসা লোকজন আল জাজিরাকে জানিয়েছে, তারা আরএসএফ যোদ্ধাদের পোস্ট করা সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও থেকে তাদের স্বজনদের মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছে। এই গোষ্ঠীটি শহর দখল করার পর থেকে চরম সহিংসতার বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জাতিগত হত্যাকাণ্ড
মরগান রিপোর্ট করেছেন, শহরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকেই জানতেন না যে তাদের পরিবারের সদস্যদের কী হয়েছে। তারা বিশ্বাস করে যে যদি তাদের আত্মীয়রা এখনও এল-ফাশেরের ভেতরে বেঁচে থাকে, তাহলে তারা হয়তো বেশিদিন সেখানে থাকবে না কারণ খাবার ও পানির অভাব... অথবা আরএসএফ তাদের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে লক্ষ্য করে আসছে।

আরএসএফ, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে, এর উৎপত্তি মূলত আরব, সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়া জানজাউইদ থেকে, যাদের বিরুদ্ধে দুই দশক আগে দারফুরে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

২০০৩ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে জাতিগত সহিংসতার প্রচারণায় আনুমানিক তিন লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের সিলভাইন পেনিকাড এল-ফাশের থেকে পালিয়ে তাওইলা শহরে আসা বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পালিয়ে আসা অনেকেই বলেছেন যে, তাদের গায়ের রঙের কারণে করা হয়েছে।

পেনিকাড বলে, আমার কাছে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অংশ ছিল লোকজন যখন তাদের জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিলেন তখন তাদের শিকার করা হয়েছিল; কেবল কালো হওয়ার কারণে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এল-ফাশারের প্রভাবশালী জাতিগত গোষ্ঠী জাঘাওয়া ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করে আসছে।

এল-ফাশারের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান ওসমান বলেন, কালো ত্বকের বাসিন্দারা, বিশেষ করে জাঘাওয়ার বেসামরিক নাগরিকরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ‘জাতিগত অবমাননা এবং শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছিল। তিনি বলেন, যদি আপনার ত্বক ফর্সা হয়, তাহলে তারা আপনাকে ছেড়ে দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণরূপে জাতিগত।

টিটিএন

Read Entire Article