সুদানে দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহরে মাত্র তিনদিনে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষ। বুধবার (৯ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক। তারা এই ঘটনাকে ‘একটি প্রকৃত গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, গত তিনদিনে আরএসএফের হাতে বহু বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যখন তারা শহর ছাড়ার চেষ্টা করছিল। সংগঠনটির ভাষায়, আজ বিশ্ব যে হত্যাযজ্ঞ দেখছে, তা এক বছর ছয় মাস আগে এল-ফাশেরে সংঘটিত গণহত্যারই ধারাবাহিকতা।
আরও পড়ুন>>
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটে সুদান
সুদানে মসজিদে আরএসএফের হামলায় নিহত ১৩
সুদানে ভূমিধসে নিশ্চিহ্ন পুরো গ্রাম, একজন বাদে সবাই নিহত
ইয়েলের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (এইচআরএল)-এর স্যাটেলাইট চিত্রেও হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা জানায়, শহরের বিভিন্ন স্থানে মানুষের দেহের আকারের বস্তু এবং মাটিতে লালচে রঙের দাগ দেখা গেছে—যা সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞের ইঙ্গিত দেয়।
আরএসএফ ও সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালে। এতে এখন পর্যন্ত লাখো মানুষ নিহত ও ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত রোববার দেড় বছর অবরোধের পর আরএসএফ দারফুরের সেনাদের শেষ ঘাঁটি এল-ফাশের দখল করে নেয়।
সুদানি সরকার জানিয়েছে, কেবল এই শহরেই দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে যাওয়া নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ, ঘরে ঘরে অভিযান এবং হাসপাতালের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে আরএসএফ সদস্যরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানোম গ্যাব্রিয়েসুস জানান, সৌদি মাতৃত্ব হাসপাতালেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৬০ জন। চিকিৎসকদের সংগঠন জানিয়েছে, মঙ্গলবার ওই হাসপাতালের ভেতরে থাকা রোগী, সেবক ও স্বজনসহ সবাইকে ‘নির্মমভাবে হত্যা’ করা হয়েছে।
এদিকে সৌদি আরব, মিশর, কাতার, তুরস্ক ও জর্ডান আরএসএফের এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার পথ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এল-ফাশেরের পতনের মাধ্যমে আরএসএফ এখন প্রায় পুরো দারফুর অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এটি সুদানকে আবারও বিভক্তির পথে ঠেলে দিতে পারে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাথানিয়েল রেমন্ড বলেন, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে শত শত মরদেহ শহরজুড়ে ছড়িয়ে আছে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এই ভয়াবহ দৃশ্য তৈরি হয়েছে—এটা নজিরবিহীন।
সুদানের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আহমেদ ইব্রাহিমের মতে, এই যুদ্ধ কেবল দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি সুদানের সম্পদ দখল ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বড় একটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

 1 day ago
                        5
                        1 day ago
                        5
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·