সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের যৌক্তিক বেতনের নির্দেশনা চেয়ে রিট

3 hours ago 4

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মর্যাদা, দায়িত্ব ও কাজের পরিমাণের তুলনায় যৌক্তিক বেতন ও পারিতোষিকের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবী ও ৪ জন আইনের শিক্ষার্থীর পক্ষে গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট আবেদন করেন।

রিটকারীরা হলেন—সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, রাফিউল সাব্বির, শামিম সাহিদ এবং হাবিবুর রহমান আল হাসান।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক অবস্থান নিম্নস্তরে রয়েছে। ওই দুই আইনের বিষয়ে আবেদনে বলা হয়, বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যা বাস্তবে তাদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। ফলে এ দুটি আইন সংবিধানের পরিপন্থি।

এতে আরও বলা হয়, এ দুই আইনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের এমন আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখা হয়েছে যা তাদের বিচারিক স্বাধীনতার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। বিচারকদের মর্যাদা, দায়িত্ব ও কাজের পরিমাণের তুলনায় আইনে প্রদত্ত বেতন ও পারিতোষিক কাঠামো খুবই অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক।

রিটে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিচারপতিদের বেতনের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৩.৮৯ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন প্রায় ৩.৪৭ লাখ টাকা; পাকিস্তানে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৫.১৭ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন প্রায় ৪.৭৪ লাখ টাকা; ভুটানে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ১.৯১ থেকে ২.১০ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন সর্বোচ্চ প্রায় ১.৮০ লাখ টাকা; মালদ্বীপে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৭ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের প্রায় ৬.৮৩ লাখ টাকা; শ্রীলঙ্কায় প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ১.০৬ থেকে ১.৩৪ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন সর্বোচ্চ ১.২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মাত্র ১.১০ লাখ টাকা, আপিল বিভাগের একজন বিচারক ১.৫ লাখ টাকা এবং হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক ৯৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতি সাংঘর্ষিক।

সেখানে বলা হয়, সংবিধানে প্রদত্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতিকে উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে ওই আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। ফলে বিচারপতিদের জন্য এক অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো সৃষ্টি হয়েছে এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিচারকার্য সম্পাদনের সক্ষমতা ব্যাহত হয়েছে। এতে নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

এফএইচ/এমকেআর/এএসএম

Read Entire Article