বিলকিস নাহার মিতু
শরৎ, সে তো ঋতুর রানি। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশবন। নদীর দুপাড়ে যখন পাগলা হাওয়া দোলা দেয়; তখন ইচ্ছে করে কাশবনে গিয়ে সাদা পাঁপড়িগুলো গায়ে মাখি। শরৎকাল প্রায় চলে যাচ্ছে, তা-ও কাশবনে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। ভাবলাম খুলনা ময়ূরী আবাসিকে যাবো কিন্তু নামলো বৃষ্টি! কাশবনে আর যাওয়া হলো না। চলে এলাম বাড়ি। কোনো ভাবে যদি ছোট কোনো বনে যাবার সুযোগ পাই। কিন্তু সেটাও হলো না।
প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে বন্ধু জিমিকে বললাম, কাশবনে বুঝি আর এ বছর যাওয়া হবে না। বন্ধু জানালো, আমি নাকি শিগগিরই কাশবন দেখতে পাবো। কয়েকদিন বাড়িতে পূজার ছুটি কাটিয়ে ১০ অক্টোবর ভোরবেলা মোরেলগঞ্জ থেকে খুলনা রওয়ানা দিলাম। আবার সেই রুটিনমাফিক ক্লাস। একমুখ বিরক্তি নিয়েই বাড়ি ছাড়লাম।
মোংলা নদী পার হয়েই যেতে হয় খুলনা। নদীর পারে অবশ্য কাশবন দেখা যায়। কাশবনে ঢুকে ফুলে হাত ছুঁয়ে দেখার যে শান্তি; সেটা দূরে আবছা ছবি দেখে আর হবে না। ভাবতে ভাবতে মোংলা পৌঁছে গেলাম। যাওয়ার সময় ভাবলাম, জিমির সঙ্গে একটু দেখা করে যাই। যেহেতু এখানেই থাকে।

দেখা হলে আমরা দুজন সকালের নাস্তার জন্য বাজারের একটি রেস্টুরেন্টে গেলাম। হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। এরপর ও বললো, ‘চল, ভ্যানে ওঠ।’ আমি উঠলাম। বললো, ‘তোকে আজ কাশবনে ঘুরতে নিয়ে যাবো।’ আমি তো আনন্দে আটখানা। ভ্যান প্রধান সড়ক পার হয়ে মোংলা পৌরসভা হয়ে নদীর পাড়ের দিক হয়ে ভেতরের দিকে সরু রাস্তায় প্রবেশ করলো।
আরও পড়ুন
মহামায়া ও খৈয়াছড়া ঝরনায় একদিন
ভোলার নির্জন চরে এক প্রহর
রাস্তার দুপাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ। ভ্যানওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখানের নাম কী?’ বললেন, ‘বেড়িবাঁধ।’ ভেতরের দিকে ভ্যান যাচ্ছে কিন্তু কোনো কাশবন দেখতে পাচ্ছি না। খানিকটা সামনেই রাস্তার বামপাশে দেখলাম মস্তবড় এক মাঠ পড়ে আছে। সেটি স্টেডিয়াম, অবশ্য নামটা কেটে দেওয়া। এরপরই দূরে দেখা যাচ্ছে সবুজ বন হাওয়ায় দুলছে। মনে হচ্ছে সাদা কেশবতী কোনো রূপবতী কন্যারা সবুজ শাড়ি পরে ঘিরে রেখেছে পশুর নদীর পাড়টাকে।

মোংলা নদীবন্দর ঘিরে এই কাশবন। আমরা ভ্যান নিয়ে বেশ খানিকটা দূরে গেলাম। নদীর মধ্যে কত-শত জাহাজ, নৌকা যাচ্ছে আর নদীর তীর ঘেঁষে হাতছানি দেয় কাশবন। কাশবনের পাশে গরু-ছাগল ঘাস খাচ্ছে। এ যেন জীবনানন্দের লেখা কবিতা দেখতে পাচ্ছি। সকাল সকাল এসেছি বলে লোকজনের ভিড় তেমন নেই। কিন্তু বিকেল হলে এখানে লোক সমাগম বেশি হয়। রাস্তার অপর পাশে আছে নেভি ক্যাম্প। সেখানের মাঠেও কাশবন হাওয়ায় দোল খাচ্ছে।
আমার বাড়ির কাছেই এমন কাশবন আছে, আমিই এর খোঁজ জানতাম না। সময় স্বল্পতা নিয়ে কখনো ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ বোঝা যায় না। তবুও সময় বেশি ছিল না বলে বেশি দেরী করিনি আমরা। জিমি আমাকে অনেকগুলো কাশফুল ছিঁড়ে দিয়েছিল। সেই কাশফুল নিয়ে কয়েকটা ছবি, ভিডিও শেষ করে আমরা খেয়াঘাটের দিকে চলে এলাম। এখানে খাওয়ার জন্য একটি রেস্টুরেন্ট লক্ষ্য করলাম। আমরা যখন গিয়েছি; তখন বন্ধ ছিল। ভ্যানওয়ালা বললেন, বিকেলের দিকে নাকি জমজমাট হয়। আমিও যদি বিকেলবেলা উপভোগ করতে পারতাম। হয়তো আরও প্রকৃতির সুখ পেতাম। তবুও বলবো, দূরের বা কাছের ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দ হবে জায়গাটি।

খেয়াঘাটের দিকে যেতে যেতে লক্ষ্য করলাম, মোংলার সমস্ত বর্জ্য এই কাশবনের এক জায়গা রাখা হয়। সেখানে গরু-ছাগল সেসব বর্জ্য খাচ্ছে। আবার অসংখ্য বক পাখিও দেখলাম। কিন্তু পলিথিন জাতীয় বর্জ্য পশু-পাখির পেটে গেলে তো সমস্যা হবে। এমনকি বর্জ্যের গন্ধে সেখান দিয়ে পার হওয়াও কঠিন। মোংলা এত পরিচ্ছন্ন এবং উন্নত। কিন্তু সেখানে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা নেই, এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।
আমরা এরই মধ্যে খেয়াঘাটে পৌঁছলাম। নৌকায় করে ওপার গিয়ে বাস ধরবো। বাসে উঠে বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে একা একা চললাম খুলনার উদ্দেশ্যে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
এসইউ/এমএস

 5 hours ago
                        7
                        5 hours ago
                        7
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·