জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানো ও একজনকে গুলি করে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন সানি মৃধা।
সানি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ আমাদের গুলি করতে থাকে। আমরা তখন পুলিশকে বলি, হাসিনা পালিয়ে গেছে, গুলি করছেন কেন। তবু, পুলিশ গুলি করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারক মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
সানি মৃধা জবানবন্দিতে আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে বাইপাইলে ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি যে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। তখন আমরা বিজয় মিছিল করি। তখন আশুলিয়া থানার দিক থেকে অনেক গোলাগুলির শব্দ আসছিল। আমরা ছাত্র-জনতা আশুলিয়া থানার দিকে রওয়ানা হই। পুলিশ আশুলিয়া থানার কাছে গলির মধ্যে চলে যায়। এ সময় আমরা পুলিশের উদ্দেশ্যে বলতে থাকি যে, হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনারা কেন এখনও গুলি করছেন?
সাক্ষী বলেন, এরপর পুলিশ পুলিশ আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। তখনই আমার হাটুর ওপরে কোমরের নিচে রানে চাইনিজ রাইফেলের গুলি ডান পায়ে লাগে। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
আমাকে বাঁচাতে আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি এখনও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না, আমাকে এখনও ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খাকার সময় একটি ফেসবুক পোস্টের ভিডিওর মাধ্যমে দেখতে পাই যে, আমার পরিচিত ও সহযোদ্ধা সজলকে আশুলিয়া থানার সামনে ভ্যানে তুলে অন্যদের সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক।
গত ২ জুলাই এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয়জন। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের মৃতদেহ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।
এফএইচ/এসএনআর/এমএস

 8 hours ago
                        5
                        8 hours ago
                        5
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·