হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজন

7 hours ago 4

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন আজ ১৩ নভেম্বর। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে নানা কর্মসূচি পালিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। এর অংশ হিসেবে রাত ১২টা ১ মিনিটে নুহাশপল্লী জুড়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। এছাড়া সকালে নুহাশপল্লীতে কেক কাটা এবং তার কবর জিয়ারত করা হবে। এসব অনুষ্ঠানে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নিশাত ও নিনিতসহ নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং হুমায়ন ভক্তরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল।

হুমায়ূন আহমেদের ছেলেবেলায় তার ডাকনাম ছিল কাজল। তার বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদও একজন লেখক ছিলেন। বিশিষ্ট লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তার ছোট দুই ভাই।

বাবা পুলিশ অফিসার হওয়ায় বদলিজনিত কারণে বিভিন্ন জেলায় পড়াশোনা করতে হয়েছে লেখককে। সেজন্য তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন। ১৯৬৭ সালে এইচএসসি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ডিস্টিংশন নিয়ে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। সেখানে মাত্র ছয় মাস থাকার পরই তিনি চলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে।

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, চিত্রনাট্য লেখক, নাট্যনির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রবন্ধকার ইত্যাদি। সাহিত্যের সব জায়গায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। কখনও আবার রং-তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছেন ক্যানভাসের রংহীন সাদা স্থান। পিছিয়ে ছিলেন না নির্মাণেও। ছোট পর্দা, বড় পর্দায় তার নানা সৃষ্টি বাঙালির মনে দাগ কেটে থাকবে হাজার বছর। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর গবেষণা করে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন।

সেসময় থেকেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। প্রথমেই প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। সেই প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ এত বেশি পাঠকনন্দিত হয় যে তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা তিন শতাধিক। তার লেখা অন্যতম উপন্যাসগুলো হলো- নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ও বাদশা নামদার ইত্যাদি। তার লেখা উপন্যাসের জনপ্রিয় চারটি চরিত্র হলো হিমু, রুপা, মিসির আলি ও শুভ্র। এছাড়া মির্জা, মিয়ার বেটা, বদি, বাকের ভাই ইত্যাদি তার সৃষ্ট অনবদ্য স্মরণীয় চরিত্র। তার লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার ইত্যাদি।

হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে আগুনের পরশমণি, দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন,‌ শ্যামল ছায়া, চন্দ্রকথা ও ঘেটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। শ্রাবণ মেঘের দিন, আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া। সর্বশেষ ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের সাহিত্যের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী লেখক। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নির্মাণের মহান এই কারিগর নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে তাকে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে নিজ হাতে গড়া নুহাশপল্লীর লিচুতলায় সমাহিত করা হয়।

আমিনুল ইসলাম/এফএ/এএসএম

Read Entire Article