দিনাজপুরে খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার পরীক্ষার্থী ও দুইজন প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে দিনাজপুর পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হোসাইন এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতদের আজ কোর্টে চালান করা হয়েছে। পরে বিচারক তাদের জেলহাজতে পাঠান।
মো. মারুফাত হোসাইন জানান, চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্নাকুড়ি গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মামুন (৩৫) ২০১৮ সালে প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের মাধ্যমে ইলেট্রোনিক্স ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়ে প্রাইমারি স্কুলে সহকারি শিক্ষককের চাকরি পান। পরে ২০২২ সালে মামুন উপজেলার চড়কডাঙ্গা গ্রামের করুণা কান্ত রায়ের ছেলে হর সুন্দর রায় সবুজকে (৩০) একই পদ্ধতিতে প্রাইমারি স্কুলে সহকারি শিক্ষক পদে চাকরি নিয়ে দেন। চাকরি পাওয়ার পর থেকে তারা দুইজন প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন।
২০১৮ সাল থেকে মামুন এবং ২০২২ সাল থেকে হর সুন্দর রায় সবুজ চাকরি প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যান। এরপর থেকে তারা প্রতিবছর প্রাইমারি সহকারি শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন পরীক্ষায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন নিয়োগে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্ন ফাঁসসহ ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর বলে দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়ে আসছেন।
সর্বশেষ তারা খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা চলাকালে দিনাজপুরে শহরের কসবা এলাকায় কেরী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে ইলেট্রোনিক্স ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সময় বিরল উপজেলার সিঙগুল পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ রায়ের ছেলে কৃষ্ণকান্ত রায় (২৫) গ্রেফতার হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে শহরের ফকিরপাড়া স্বপ্নচুঁড়া ছাত্রাবাস থেকে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সদস্য মামুন ও হর সুন্দর রায় সবুজকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ওই ছাত্রাবাস থেকে ২৪টি প্রবেশপত্র, ননজুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্প ১০টি, ৫টি ইলেট্রোনিক্স ডিভাইস উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, এই প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সদস্যরা প্রতি প্রার্থীকে চাকরি নিয়ে দেয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা করে চুক্তি করেছেন। সে কাজে এই নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। তারা চাকরির জন্য চুক্তি হওয়ার প্রার্থীদের এসএসসি, এইচএসসি ও অনার্সের মূল সাটিফিকেটগুলো নিয়ে রেখেছে। নেয়া হয়েছে স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেকের পাতা। সেই সাটিফিকেট ও চেকের পাতাগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। এই চক্রের সঙ্গে ডাক বিভাগসহ যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চক্রটিকে ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। আমরা পুরোচক্রকে গ্রেফারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পুলিশ সুপার বলেন, প্রতারক চক্রের দুই সদস্য মামুন ও হর সুন্দর রায় সবুজ এ কাজ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে। বাড়ি-ঘর, জায়গা-জমি ব্যাংক ব্যালেন্স গড়ে তুলেছেন। তারা যে চাকরি করেন তা দিয়ে এত কিছু করা সম্ভব নয়। আমরা সেগুলোও খতিয়ে দেখছি।
এমদাদুল হক মিলন/এনএইচআর/জেআইএম

2 weeks ago
12









English (US) ·