৫ বছরেও শেষ হয়নি চারশো মিটার সেতু নির্মাণ

2 weeks ago 11

কক্সবাজার সদর উপজেলার নদীঘেরা ইউনিয়ন ‘ভারুয়াখালী’। সদরের অপর ইউনিয়ন খুরুশকুল ও চৌফলদণ্ডীর সঙ্গে ভারুয়াখালীকে আলাদা করেছে ‘জোয়ারি খাল’। তাই ভারুয়াখালীর লোকজনকে জেলা সদরে আসতে হলে রামু কিংবা ঈদগাঁও উপজেলা হয়ে দীর্ঘ ৩০-৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনবার গাড়ি পরিবর্তন করে আসতে হয়। তবে জোয়ারি খালে মাত্র ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু দু’পাড়ের লাখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পারে। একটি সেতু প্রায় ১৭-২০ কিলোমিটার পথ কমিয়ে পার্শ্ববর্তী খুরুশকুল ইউনিয়ন হয়ে সহজ যোগাযোগ স্থাপন করবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মাঝামাঝি সময়ে হুইপ সাইমুম সরোয়ার কমলের প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালে স্বপ্নের ‘খুরুশকুল-ভারুয়াখালী সেতু’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০২১ সালে শুরু হয় দু’পাড়ের লাখো মানুষের স্বপ্নের সেতুর নির্মাণ কাজ।

এতে উপকূলীয় এ অঞ্চলের লবণ ও চিংড়ি চাষিদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়। ব্রিজ পার হয়ে মাত্র নয়-দশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছানো যাবে জেলা শহরে। কিন্তু কাজ শুরুর প্রায় পাঁচ বছর হতে চললেও আজও আলোর মুখ দেখেনি জোয়ারি খালের ব্রিজ। ২০২৩ সালে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বারবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজের গতি ফেরানো যায়নি। ফলে জরুরি যাতায়তকারীদের ছোট খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়।

৫ বছরেও শেষ হয়নি চারশো মিটার সেতু নির্মাণ

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজার কার্যালয় সূত্র মতে, ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পায় ৩৯২ মিটার দীর্ঘ ভারুয়াখালী-খুরুশকুল সেতু প্রকল্প। দুই দফা দরপত্র আহ্বানের পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু করে তমা কনস্ট্রাকশন ও এম এ জাহের লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে দুই দফা সময় বাড়িয়েও কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। সেতুর ১৩টি স্প্যানের মধ্যে আটটি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। তবে মূল খালের ওপর এখনো কাজ শুরু হয়নি।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর একাংশে কাজ করছেন মাত্র চারজন শ্রমিক। নির্মাণের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান কথা বলতে রাজি হননি। দ্রুত কাজ শেষ করে ব্রিজটি ব্যবহার উপযোগী করতে নির্মাণাধীন ব্রিজের ভারুয়াখালী অংশে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

আরও পড়ুন-
৬ বছর ধরে সাঁকো দিয়ে সেতু পারাপার
৩ মাস পর ভেসে উঠলো রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতু, কাল থেকে উন্মুক্ত
ভাসানী সেতুতে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলিংয়ের ফাঁকা স্থান

সূত্রের দাবি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কুমিল্লা পাঁচ আসনের সাবেক এমপি এম এ জাহের আত্মগোপনে যাওয়ার পর থেকেই প্রকল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জমি অধিগ্রহণের জটিলতাও।

৫ বছরেও শেষ হয়নি চারশো মিটার সেতু নির্মাণ

স্থানীয় বাসিন্দা রাজিবুল হক রাজু জানান, পেশাগত কারণে গ্রামের অনেকে শহরে বাস করেন। আমাদের ইউনিয়নকে ঘিরে রেখেছে জোয়ারি খাল বা বাইরের খাল। প্রয়োজনের নিরিখে গ্রামে আসতে প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একাধিক গাড়ি বদল করে আসতে হয়। সেতুটি ব্যবহার উপযোগী হলে শহরের সঙ্গে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার রাস্তা কমে যাবে।

মাদরাসা শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, যাতায়াত ভোগান্তির কারণে এলাকার শিক্ষার্থীদের শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। সেতুটি পুরোপুরি শেষ হলে এলাকার শিক্ষার্থীরা জেলা শহরের স্কুল-কলেজ মাদরাসায় সহজে যাতায়াত সুবিধা পাবে। নিয়মিত বাড়ি থেকে যাওয়ার সুযোগ পাবে। ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন অসুস্থরা।

ভারুয়াখালীর সন্তান জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মো. শওকত ওসমান বলেন, এ সেতু ভারুয়াখালী-খুরুশকুল ইউনিয়নকে সংযুক্ত করলেও উপকার ভোগ করবেন আশপাশের পিএমখালী, চৌফলদণ্ডী, রামুর রশিদ নগর ইউনিয়নের অধিবাসীরাও। সেতুটি পরিপূর্ণ না হওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লবণ, চিংড়ি, শাকসবজির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। শিক্ষার্থী, মুমূর্ষু রোগী যথাযথ সময়ে সদরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। যাতায়াত অসুবিধার ফলে ডাকাতি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধের শিকার হতে হয়।

৫ বছরেও শেষ হয়নি চারশো মিটার সেতু নির্মাণ

কাজের ধীরগতিতে হতাশা প্রকাশ করে ভারুয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, চারশ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় ব্রিজে ৭-৮ জন লোক দিয়ে কাজ করালে তা সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হবে কি করে? কাজ শুরুর পর থেকেই স্বল্প সংখ্যক লোক দিয়ে কাজ করা হয়। ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ করার তাগিদ দেওয়া হোক, অন্যথায় তাকে বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হোক।

কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। শিগগিরই সেতুতে বসানো হবে নবম স্প্যান। আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

এফএ/এমএস

Read Entire Article