৬ মাস বন্ধ এক্সরে, মাঝেমধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চেক করেন আরএমও

2 weeks ago 9

দুই চিকিৎসকে চলছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। নেই পর্যাপ্ত নার্স-টেকনিশিয়ান। কোটি টাকার এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন তেমন খোলাও হয় না। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ এবং অন্তঃবিভাগে ৪৫ থেকে ৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাদের।

সূত্র জানায়, হাসপাতালে কাগজে-কলমে তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন। এরমধ্যে একজন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য ছুটিতে রয়েছেন। বাকি দুজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি টেকনিশিয়ানের অভাবে গত ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি মাঝেমধ্যে চেক করতে আসেন আরএমও। ৩২ জন নার্সের মধ্যে সাতজনের বেশি বিভিন্ন ধরনের ছুটিতে রয়েছেন।

৬ মাস বন্ধ এক্সরে, মাঝেমধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চেক করেন আরএমও

কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এটি ব্যবহার করা হয় না। ফলে রোগীদের সামান্যতম পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ছুটতে হচ্ছে আশপাশের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। নয়তো অধিক অর্থ ব্যয় করে সেবা নিতে হচ্ছে রংপুর থেকে।

আরও পড়ুন
জীর্ণ দশায় পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল
নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎ গেলে ভরসা মোমবাতি
জনবল সংকটে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আসমা আক্তার বলেন, ‘চিকিৎসকের কাছে গেলে শুধু ওষুধ লিখে দেন। সেই ওষুধও ঠিকমতো সাপ্লাই থাকে না। টেস্ট দিলে বাইরে গিয়ে করতে হয়। সব টেস্ট করতে চার-পাঁচ হাজার টাকা শেষ হয়ে যায়। টেস্টের টাকা জোগাতে গিয়ে ওষুধ কেনার টাকাই থাকে না।’

৬ মাস বন্ধ এক্সরে, মাঝেমধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চেক করেন আরএমও

আয়েশা আক্তার নামে আরেক আরেক রোগী জানান, ‘গর্ভাবস্থায় রুটিন চেকআপের জন্য এসেও তিনি এখানে কোনো পরীক্ষা করাতে পারেননি। তাকে রংপুর যেতে হয়েছে। এখানে শুধু আমার প্রেশার, ওজন আর পেটে হাত দিয়ে বাচ্চার নড়াচড়া দেখেছিল। একজন নার্স দেখে এ রিপোর্ট দিয়েছিল। সরকারের উচিত হাসপাতালটির দিকে নজর দেওয়া।’

বহির্বিভাগে আসা আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ বলেন, ‘আমি আলট্রাসনোগ্রাম রুমটি কখনো খোলা দেখিনি। সরকার আমাদের মেশিন দিয়েছে সেবা দেওয়ার জন্য। বন্ধ থাকলে আমরা সেবা পাব কীভাবে?’

৬ মাস বন্ধ এক্সরে, মাঝেমধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চেক করেন আরএমও

হাসপাতালের হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইসমত আরা বলেন, ‘আমার কাজ হারবাল সম্পর্কে হলেও জনবল না থাকায় আমি রোগীদের টেস্টের রিসিভ নিচ্ছি। কর্তৃপক্ষ আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছে। টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম বন্ধ। সিবিসি, আরবিএসসহ মাত্র চার-পাঁচটি প্রাথমিক টেস্ট এখানে হয়।’

হাসপাতালের নার্স রুমি আক্তার বলেন, ‘জনবল খুবই কম। গর্ভবতী মহিলাদের সেবায় আমরা চারজন নার্স কাজ করি। আমাদের অন্তঃবিভাগ এবং বহির্বিভাগ দুটোই দেখতে হয়। আগে সপ্তাহে একদিন আলট্রাসোনো হলেও এখন জনবল না থাকায় সেটাও বন্ধ।’

৬ মাস বন্ধ এক্সরে, মাঝেমধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চেক করেন আরএমও

আদিতমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন সেটি নেই। তীব্র সংকটে ভুগছি। টেকনিশিয়ানের অভাবে এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালাতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক আছেন মাত্র দুজন। এ দুজন দিয়ে আমরা ইনডোর এবং আউটডোর পরিচালনা করছি। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী মাত্র দুজন চিকিৎসক দিয়ে সামাল দিচ্ছি। আশা করছি সরকার আমাদের দিকে নজর দেবে।

আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article