৯ দিনেও সেন্টমার্টিনে যাননি কোনো পর্যটক

2 days ago 6

অনুমতি থাকলেও গত ৯ দিনে পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাননি। দ্বীপজুড়ে নীরবতা। পর্যটন মৌসুমেও নেই ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণা। এতে হতাশা দ্বীপবাসী ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। রোববার (৯ নভেম্বর) কক্সবাজার থেকে কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিনে পৌঁছেনি।

জানা গেছে, এ বছরের পর্যটক মৌসুমে ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যেতে কোনো বাধা না থাকা শর্তেও যাত্রী সংকটের কারণে কোনো জাহাজ টিকিট বিক্রি করতে পারেনি। ফলে কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাননি।

তবে ডিসেম্বর থেকে দুই মাস রাতে থাকার অনুমতি থাকায় জাহাজ মালিকরা ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে নিয়মিতভাবে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাছাড়া কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে সাগর পথে ১২০ কিলোমিটার দূরের পথ পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিনে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা এক ধরনের কঠিন। এ ভোগান্তির আশঙ্কায় পর্যটকেরা সেন্টমার্টিন যেতে চাচ্ছেন না। যার কারণে পর্যাপ্ত পর্যটক পাওয়া যায়নি।

৯ দিনেও সেন্টমার্টিনে যাননি কোনো পর্যটক

অপরদিকে সেন্টমার্টিনে হোটেল, রিসোর্ট, শ্রমিক, মাছ ব্যবসায়ী, ভ্যান ও অটোরিকশা ইজিবাইক চালকসহ পর্যটক ব্যবসানির্ভর মানুষ আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন পর্যটকের জন্য।

সেন্টমার্টিনের শ্রমিক লিয়াকত আলী জানান, পর্যটক দ্বীপে আসবে সে আশা নিয়ে কক্সবাজার শহরে ছিলাম সেখান থেকে চলে আসছি, কিন্তু ভরা মৌসুমেও সেন্টমার্টিনে পর্যটক না আশায় হতাশ হয়েছি। বিগত বছর এ সময় প্রচুর পর্যটক আসতো দ্বীপে, এখন সরকারি বিধিনিষেধ ও কক্সবাজার থেকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকদের আসতে হবে। নভেম্বর মাসে রাত্রী যাপনে নিয়ম না থাকায় পর্যটকদের আসেনি, পাশাপাশি আমরা নিজেরা সমস্যা পড়েছি।

সেন্টমার্টিনের শুঁটকি ব্যবসায়ী আলী হায়দার জানান, ‘দ্বীপে পর্যটক আসলে শুঁটকি মাছ বিক্রি করতে পারি তা না হলে এ ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়। নভেম্বর মাসে পর্যটক আসার কথাছিল কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ পর্যটক না পাওয়া পর্যটকবাহী জাহাজ দ্বীপের উদ্দেশে আসেনি। ডিসেম্বর থেকে পর্যটক আসার কথা। অল্পসংখ্যক পর্যটক দ্বীপে আসলে তেমন ভালো ব্যবসা-বাণিজ্য হয় না।’

সেন্টমার্টিনের সি প্রবাল রিসোর্টের পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম জিহাদি জানান, ‘দ্বীপের যাদের নিজস্ব মালিকানায় হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে। কিংবা যারা ভাড়া নিয়েছেন, ‘তাদের সবার দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার নামে পর্যটকদের ভ্রমণে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাতে পর্যটকদের আগ্রহ অনেকটা কমে গেছে বলে তিনি মনে করেন।’

৯ দিনেও সেন্টমার্টিনে যাননি কোনো পর্যটক

তিনি বলেন, ‘নভেম্বর থেকে পর্যটকদের আসার কথা ছিল। কিন্তু পর্যটক সংকটের কারণে জাহাজ কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত এখনো যাত্রী নিয়ে দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেনি। দ্বীপের দুই-আড়াই শতাধিক যেসব হোটেল-রিসোর্টে, কটেজ ও রেস্তোরাঁ রয়েছে সেগুলো এখন খালি পড়ে আছে।’

তিনি আরও জানান, ‘ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দিনে দুই হাজার পর্যটক আসার অনুমতি থাকলেও বাস্তবে কতজন আসবে তা বলা কঠিন। হোটেল-রিসোর্ট পরিচালনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতনসহ নানা খরচ থাকে। কয়েক মাসের মৌসুমের আয় দিয়ে পুরো বছরের খরচ চালাতে হয়। এবারে সেই আয় পোষাবে কি না, তা নিয়েই বড় দুশ্চিন্তা।’

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, ‘দ্বীপের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ পর্যটন ও মাছ শিকার নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করেন। সারাবছর দ্বীপবাসীরা অপেক্ষা করেন কয়েক মাসের পর্যটন মৌসুমের জন্য। এ মৌসুমের আয়ের ওপর নির্ভর করে তাদের সারাবছরের সংসার খরচ। নভেম্বর মাস থেকে পর্যটকদের দ্বীপে ভ্রমণে আর বাধা নেই তবুও কেউ আসছে না। কারণ এ মাসে সেন্টমার্টিনে রাত্রী যাপন করা যাবে না। নভেম্বর মাস শুরু ৯ দিনেও কোনো পর্যটক দ্বীপে আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে যদি পর্যটকরা দ্বীপে গিয়ে আধা ঘণ্টাও ঘুরতে না পারে, আবার জাহাজে উঠে ফিরতে হয়, তাহলে কেউ কেন আসবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি এভাবে পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে খুব শিগ্‌গির দ্বীপের পর্যটন শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।’

পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, ‘সেন্টমার্টিনে নভেম্বর মাসে রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকেরা নভেম্বর মাসে দ্বীপে ভ্রমণে যেতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। টিকিটও বেচাবিক্রি হচ্ছে না। পর্যটক না থাকলে জাহাজ চালানোর সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট দিয়ে ১২০ কিলোমিটারের বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়া করতে একটি জাহাজের জ্বালানি-কর্মচারীদের বেতনসহ খরচ হয় ১০ লাখ টাকা। পর্যটক না থাকলে পুরো টাকা লোকসান গুনতে হবে। তাই আপাতত নভেম্বর মাসে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে উখিয়ার ইনানী অথবা টেকনাফের কোনো জায়গা থেকে জাহাজ চালানোর সুযোগ করে দিলে সেখান থেকে জাহাজ চলাচল শুরু করা যাবে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন জানান, ‘নভেম্বর মাস শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাননি। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে রাত্রী যাপনের নিষেধাজ্ঞাসহ ১২টি নির্দেশনা জারি রয়েছে। আশা করছি, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকরা নিয়ম মেনে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাবেন।’

জাহাঙ্গীর আলম/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article