অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে সরকারের অর্ধকোটি টাকার রেসকিউ বোট
সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত দুর্গম এলাকায় বন্যা ও দুর্যোগে ত্রাণ এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘টাঙ্গুয়া-সুনামগঞ্জ-১ নামের রেসকিউ বোটটি এখন অযত্নে পড়ে থেকে প্রায় অচল ও নষ্ট হওয়ার পথে।
২০২২ সালে সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যায় এ বোটটি ছিল এই এলাকার ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের অন্যতম ভরসা। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পাঠানো, বন্যার্তদের উদ্ধার, সব ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বন্যা শেষে আর সংরক্ষণ বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, ৫৪ ফুট লম্বা ও ১২ দশমিক ৫ ফুট চওড়া বোটটির ছাউনি ছিঁড়ে গেছে, বিভিন্ন অংশে মরিচা ধরেছে এবং ইঞ্জিনের অবস্থাও নাজুক। এখন নদীতে গোসল করতে আসা শিশুরা বোটটির ওপর চড়ে খেলাধুলা করে। বর্তমানে বৌলাই নদীর পাড়ে তাহিরপুর থানা ঘাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বোটটি। শুকনো মৌসুমে মাটিতে পড়ে থেকে এবং বর্ষায় পানিতে অযত্নে ভাসতে ভাসতে এখন এর কাঠামো ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০২১ ও ২০২২ সালে হাওর ও উপকূলীয় জেলাগুলোর জন্য মোট ৬০টি রেসকিউ বোট তৈরি করে। এর মধ্যে ২০২২ সালে সুনামগঞ্জ জেলায় দুটি বোট হস্তান্তর করা হয়। একটি তাহিরপুরে, অন্যটি সুনামগঞ্জ সদরে।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু মিয়া বলেন, কয়েক বছরের মধ্যেই এত দামি বোটটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটু যত্নে রাখলে বা মাঝে মাঝে ব্যবহার করলে এত বড় সম্পদ আজ এভাবে নষ্ট হতো না।
থানা ঘাটের স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, বোটটা অনেকদিন ধরেই এভাবে পড়ে আছে। কখনো শুকনো নদীতে, কখনো পানিতে। এভাবেই পড়ে থাকে বোটটি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন তাহিরপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তুজাম্মিল হক নাছরুল বলেন, তাহিরপুর হাওরপ্রধান এলাকা। প্রতি বছর এখানে বন্যার আশঙ্কা থাকে। এমন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রতি উদাসীনতা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুহিবুর রহমান বলেন, রেসকিউ বোটটি হস্তান্তরের পর থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবছর ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে কিছুটা যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি; কিন্তু নিয়মিত মেরামতের জন্য সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান মানিক বলেন, বোটটির পেছনের অংশের উচ্চতা বেশি হওয়ায় নদীতে সহজে চলাচল করতে পারে না, ব্রিজে লেগে যায়। এছাড়া জ্বালানি ব্যয়ও অনেক বেশি। তবে আমরা দ্রুত এটি সংস্কার ও চলাচল উপযোগী করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানাব।

1 day ago
8









English (US) ·