বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও সংবাদপ্রধান ডেবোরা টারনেসের পদত্যাগ কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, বরং ‘পরিকল্পিত অভ্যন্তরীণ ক্যু বা অভ্যুত্থানের’ কারণেই এটি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় পত্রিকা ডেইলি সানের সাবেক সম্পাদক ডেভিড ইয়েল্যান্ড।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিবিসি রেডিও ৪-এর টুডে অনুষ্ঠানে ইয়েল্যান্ড বলেন, এটি ছিল একপ্রকার অভ্যুত্থান। আরও খারাপভাবে বলতে গেলে, এটি ছিল ভেতর থেকে চালানো একটি ষড়যন্ত্র। বিবিসির ভেতরেই, এমনকি বোর্ডের ভেতরে থাকা কিছু ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে টিম ডেভি ও তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের দীর্ঘ সময় ধরে দুর্বল করে তুলেছেন। গতকাল যা ঘটেছে, তা কোনো হঠাৎ ঘটনা নয়, এটি দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির ফল।
ইয়েল্যান্ড আরও বলেন, এখানে মূলত পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থতা ঘটেছে। আমি চেয়ারম্যান সামির শাহকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করছি না, তবে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাজ হলো তাদের প্রধান নির্বাহীকে হয় সমর্থন দেওয়া, নয়তো সরিয়ে দেওয়া। কিন্তু এখানে টিম ডেভিকে কেউ বরখাস্ত করেননি, তিনি নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন। এটিই হলো পরিচালনা কাঠামোর ব্যর্থতার সংজ্ঞা।
রোববারের (৯ নভেম্বর) এই পদত্যাগ আসে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজ ও যুক্তরাজ্যের ডানপন্থি মহল বিবিসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তুলে তীব্র সমালোচনা শুরু করে।
এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বিবিসির প্রোগ্রাম প্যানোরামাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ভাষণ সম্পাদনার সময় এমনভাবে দৃশ্য সাজানো হয়েছিল, যেন তিনি ক্যাপিটল হিলে হামলাকে উৎসাহ দিয়েছেন। পরে জানা যায়, ভাষণের দুটি অংশ এক ঘণ্টা ব্যবধানে দেওয়া হলেও সেগুলো একসঙ্গে জোড়া লাগানো হয়েছিল ও ট্রাম্পের ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান’ অংশটি বাদ দেওয়া হয়।
বিবিসির সাবেক উপদেষ্টা মাইকেল প্রেসকট এই সম্পাদনাকেই পক্ষপাতের প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ইয়েল্যান্ডের বক্তব্য বিবিসির ভেতরের পরিবেশের সঙ্গেও মিলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির এক সূত্র রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে বলেন, এটা সত্যিই অভ্যুত্থানের মতো লাগছে। এটি মূলত বিবিসির রাজনৈতিক শত্রুদের দীর্ঘদিনের প্রচারণার ফল।
অন্যদিকে, স্কাই নিউজের সাবেক রাজনৈতিক সম্পাদক অ্যাডাম বোলটন বলেন, ট্রাম্প আসলেই দাঙ্গাকারীদের উৎসাহিত করেছিলেন- এই বার্তাটি মোটাদাগে সত্য। দীর্ঘ ভাষণ সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে অংশবিশেষ একত্র করা সংবাদমাধ্যমে অস্বাভাবিক নয়।
ডেভি জানিয়েছেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব ছাড়ছেন না। পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে একটি ‘সুশৃঙ্খল রূপান্তর প্রক্রিয়ার’ মধ্য দিয়ে তিনি বিদায় নেবেন। অন্যদিকে, টারনেস বলেছেন, প্যানোরামা বিতর্ক এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা বিবিসির ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে, আর আমি এই প্রতিষ্ঠানটিকে ভালোবাসি।
বিবিসির সাংবাদিক নিক রবিনসন সোমবার (১০ নভেম্বর) জানান, প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিকরা যেখানে কেবল সম্পাদনা-ত্রুটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন, সেখানে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকরা আরও কঠোর অবস্থান নিতে চেয়েছেন।
চেয়ারম্যান সামির শাহ সোমবার (১০ নভেম্বর) পার্লামেন্টের কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্ট কমিটিতে উপস্থিত হয়ে পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করবেন ও প্যানোরামা সম্পাদনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।
টিম ডেভি ও ডেবোরা টারনেসের পদত্যাগের পর সরকারপক্ষ থেকে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের ভেটেরান মন্ত্রী লুইস স্যান্ডার-জোন্স বিবিসির বিরুদ্ধে ‘প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাত’ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি স্কাই নিউজকে বলেন, বিবিসি যত ব্যাপক পরিসরের দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক খবর পরিবেশন করে, তার আউটপুট এখনো জনগণের কাছে অত্যন্ত বিশ্বস্ত। মতভেদ থাকা সত্ত্বেও সবাই তথ্যের জন্য বিবিসিকেই ব্যবহার করে, এটাই তার শক্তি।
সূত্র: গার্ডিয়ান
এসএএইচ

2 hours ago
5









English (US) ·