আন্দোলন দমনের জন্য পুরস্কার দিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার

1 day ago 2
আন্দোলন দমনের জন্য পুরস্কার দিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার

আন্দোলন দমনের জন্য পুরস্কার দিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার

বাংলাদেশ

সমকাল প্রতিবেদক 2025-11-05

জুলাই আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে গিয়ে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকার জন্য রামপুরা থানায় গিয়ে এক লাখ টাকা পুরস্কারও দিয়ে এসেছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন রাজধানীর বাড্ডা থানার এসআই (নিরস্ত্র) গোলাম কিবরিয়া খান। 

এদিন প্রসিকিউশনের ৫ ও ৬ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পাঁচ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এসআই কিবরিয়া। এরপর তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরি সহকারী কনস্টেবল আবু বক্কর সিদ্দিকের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

এসআই কিবরিয়া বর্তমানে বাড্ডা থানায় থাকলেও জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় একই পদে কর্মরত ছিলেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই থানায় অবস্থানকালে বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারি, আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে গিয়ে সিআর (চায়নিজ রাইফেল) ফায়ার করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। পরদিন জুমার নামাজের পর রামপুরায় বিটিভি ভবনের তিন নম্বর ফটকে দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু আমিসহ সব পুলিশ সদস্যকে থানায় থাকার নির্দেশনা দেন ওসি। আমরা সবাই থানায় অবস্থান করি। ওই দিন জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশে জমায়েত হতে থাকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। এমন পরিস্থিতিতে রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান ও খিলগাঁও জোনের তৎকালীন এডিসি রাশেদুল ইসলামের নির্দেশনায় আন্দোলনরতদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে রামপুরা থানা ভবনের পাশে বনশ্রী জামে মসজিদের সামনে নাদিম মিজান নামে একজন নিহত হন। পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামে আরেকজন নিহত ও মুসা খান নামে এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ২১ বা ২২ জুলাই রামপুরা থানায় এসে ওসি স্যারের কাছে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন কমিশনার হাবিবুর রহমান। পরে রামপুরা থানা ভবনের পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদের কার্নিশে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা একজনকে লক্ষ্য করে গুলি করার ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে জানতে পারি, ঝুলন্ত ব্যক্তিকে এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার গুলি করেছে। 

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এসআই কিবরিয়াকে জেরা করেন পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেপ্তার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ছয়জন।

সাক্ষী না আসায় পেছাল সাক্ষ্য 
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পরপর তিন ধার্য তারিখে সাক্ষী না আসায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। নতুন করে আগামী ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল এ তারিখ দেন। 

পরে দুই আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউশনের দায়িত্ব হলো কোনো ব্যক্তি বা আসামির বিরুদ্ধে চার্জ প্রমাণ করা। এর অন্যতম প্রক্রিয়া সাক্ষী উপস্থাপন। অথচ সেই সাক্ষীই গত তিনটি কার্যদিবসে হাজির হয়নি। আমরা কারণ জানতে না পারলেও প্রতীয়মান– প্রসিকিউশনের ব্যর্থতার কারণে আদালতে আসেননি সাক্ষী।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া এই মামলায় কনস্টেবল সুজনসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সাক্ষী না আসায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে বলে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

© Samakal
Read Entire Article