আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে সোমবার ভোরে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ২০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। কয়েক মাস আগেই একই অঞ্চলে একাধিক ভূমিকম্প ও আফটারশকে ২ হাজার ২০০র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাই প্রশ্ন উঠছে, আফগানিস্তানে এত বেশি ভূমিকম্প হয় কেন?
ভূমিকম্প আফগানিস্তানে কতটা সাধারণ ঘটনা?
পাহাড়বেষ্টিত আফগানিস্তান প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ভূমিকম্পে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫৬০ জনের মৃত্যু হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি মার্কিন ডলার। ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে পাঁচ মাত্রার বেশি শক্তিশালী অন্তত ৩৫৫টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>>
আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২০
আফগানিস্তানে ভূমিকম্প: অনেক পরিবার হারিয়েছে অর্ধেকের বেশি সদস্য
আফগানিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই ফের ভূমিকম্প, সাহায্য পাঠাচ্ছে বিভিন্ন দেশ
আফগানিস্তান কেন ভূমিকম্পপ্রবণ?
ভূতাত্ত্বিকভাবে আফগানিস্তান ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের প্রান্তে অবস্থিত। এর দক্ষিণে রয়েছে ভারতীয় ও আরবীয় টেকটোনিক প্লেট। এই তিনটি প্লেটের সংঘর্ষ অঞ্চল তৈরি করেছে বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্প সক্রিয় এলাকা। ভারতীয় প্লেটের উত্তরমুখী গতি ও ইউরেশীয় প্লেটের সাথে সংঘর্ষ আফগানিস্তানে ঘন ঘন ভূমিকম্পের মূল কারণ।
কোন কোন এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ?
দেশটির পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানী কাবুলও ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাবুলে প্রতি বছর গড়ে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় ভূমিকম্পে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকিও মারাত্মক, যা প্রাণহানি আরও বাড়িয়ে দেয়।
আফগানিস্তানের ভয়াবহ ভূমিকম্প
১৯০০ সাল থেকে দেশটিতে প্রায় ১০০ ‘বিধ্বংসী’ ভূমিকম্প হয়েছে।
- ২০২২ সালের ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে এক হাজার মানুষ নিহত হন।
- ২০২৩ সালে এক মাসের ব্যবধানে একাধিক ভূমিকম্পে আবারও এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
- ২০১৫ সালের ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে মোট ৩৯৯ জন প্রাণ হারান।
- ১৯৯৮ সালে তিন মাসের ব্যবধানে দুটি বড় ভূমিকম্পে যথাক্রমে ২ হাজার ৩০০ ও ৪ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যু হয়।
ক্ষতি কীভাবে কমানো সম্ভব?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভবন নির্মাণের সময় ভূমিকম্প-সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহার এবং পুরোনো স্থাপনা সংস্কার করলে প্রাণহানি অনেকাংশে কমানো যাবে। পাশাপাশি উন্নত মনিটরিং ও আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ভূতাত্ত্বিক ফল্টলাইন চিহ্নিতকরণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জনবসতি পুনর্বিন্যাস করাও জরুরি।
সূত্র: রয়টার্স
কেএএ/

15 hours ago
5









English (US) ·