আশুলিয়া থানাধীন চারটি ইউনিয়নের ৭২টি মৌজার ভূমি মালিকানা নিয়ে চলমান জটিলতা ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আক্তার গ্রহণ করেছেন ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি আশুলিয়া ভূমি অফিসকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করে সরাসরি খোলা স্থানে গণশুনানি করে ভূমি মালিকদের সমস্যা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করছেন।
আশুলিয়া ভূমি অফিসে সাদিয়া আক্তার দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে জমিসংক্রান্ত নামজারি ও বিশেষ করে মিসকেসের মামলা ঘিরে পক্ষ-বিপক্ষের বিরোধ, বহিরাগতদের দখল প্রচেষ্টা এবং অফিসকেন্দ্রিক হয়রানি ছিল নিত্যদিনের চিত্র। প্রতারিত হচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। জমির প্রকৃত মালিকানা নিয়ে দেখা দিচ্ছিল ধোঁয়াশা। অভিযোগ উঠছিল, ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী ও বহিরাগত দালালদের যোগসাজশে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছিল অবৈধ অর্থ। এসব জটিলতা নিরসনে সাদিয়া আক্তার সম্প্রতি শুরু করেছেন ‘মাঠপর্যায়ের গণশুনানি’ নামের অভিনব কার্যক্রম। খোলা স্থানে বসেই তিনি নামজারি ও মিসকেস সংক্রান্ত অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এতে করে বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষই একে অপরের বক্তব্য সকলের সামনে উপস্থাপন করতে পারছেন এবং জনসমক্ষে ঘটনার সত্যতা যাচাই হচ্ছে।
গণশুনানিতে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার পক্ষগণ উপস্থিত থেকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, আবার কেউ বা পুরোনো দলিল, খতিয়ান, খারিজ-খাজনার কাগজ দেখিয়ে নিজেদের অধিকার দাবি করছেন। এসিল্যান্ড নিজে প্রতিটি মামলা মনোযোগ সহকারে শুনে যাচ্ছেন এবং ন্যায়সঙ্গত দিক থেকে নিষ্পত্তি করছেন।
আশুলিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গাফ্ফার বলেন, ‘ভূমি অফিসে এখন নিয়মিত ও হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। নামজারি ও মিসকেসের নিষ্পত্তি হচ্ছে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। তবুও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের সুবিধা আদায় করতে না পেরে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে অফিসকে বিতর্কিত করতে চাইছে।’
আমির আলী নামে একজন সেবা প্রত্যাশী বলেন, এসিল্যান্ডের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, কারণ এতে প্রকৃত সত্য প্রকাশ পায়, এবং লুকোচুরি করে একতরফা রায় দেওয়ার সুযোগ থাকে না।
আব্দুল করিম নামে আরেক সেবা প্রত্যাশী বলেন, এসিল্যান্ড সাদিয়া আক্তার যোগদানের পর আশুলিয়া ভূমি অফিসে সেবার মান উন্নত হয়েছে। এসিল্যান্ড সাধারণ মানুষের সেবায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভালো সেবা পাচ্ছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ সারা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।
এসিল্যান্ড সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘ভূমি অফিসের কার্যক্রম জনসমক্ষে উন্মুক্ত থাকলে সেবা আরও স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়। আমার লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত, হয়রানিমুক্ত ও জনগণের আস্থাভাজন একটি ভূমি প্রশাসন গড়ে তোলা। দালাল চক্র যেন অফিসের চত্বরে গ্রাহকদের প্রভাবিত করতে না পারে, সে জন্যই খোলা মাঠে গণশুনানিকে আমরা নিয়মিত প্রক্রিয়ায় রূপ দিতে চাই।’ এছাড়াও আমি এই অফিসে যোগ দেওয়ার পর মাত্র চার মাসে বছরের পর বছর ঝুলতে থাকা অনিষ্পন্ন মিস গুলো থেকে প্রায় চার শতাধিক মিসকেস নিষ্পত্তি করেছি।
এমন স্বচ্ছ ভূমি সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মহলও আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই উদ্যোগই ভূমি ব্যবস্থাপনার দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনের পথ দেখাবে। এসিল্যান্ড সাদিয়া আক্তারের সময়োপযোগী ও ব্যতিক্রম উদ্যোগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন আশুলিয়া ভূমি অফিসে সেবা প্রত্যাশীগণ।

 5 months ago
                        43
                        5 months ago
                        43
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·