গাজীপুর-২ আসন এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। পরে তা চলে যায় আওয়ামী লীগের কাছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পলাতক দলটির নেতাকর্মীরা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি। বসে নেই জামায়াতে ইসলামীও। দুই দলের প্রার্থী জোরেশোরে গণসংযোগ করছেন।
১৯৯১ সালে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন অধ্যাপক এম এ মান্নান। এরপর ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।
গাজীপুর জেলা হওয়ার পর ১৯৮৬ সালে গাজীপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রথম এমপি হন হাসান উদ্দিন সরকার। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তবে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এম এ মান্নান ধানের শীষ নিয়ে রেকর্ড ভোটে জয় পান। পরে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। তিন মাস পর ১২ জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসানউল্লাহ মাস্টার।
২০০১ সালের নির্বাচনেও শ্রমিক নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার বিজয়ী হন। ২০০৪ সালের মে মাসে দুর্বৃত্তের গুলিতে তিনি নিহত হওয়ার পর উপনির্বাচনে বিজয়ী হন তারই ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। পরে ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনি নৌকা নিয়ে বিজয়ী হন। এ আসনটি থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে নবগঠিত গাজীপুর-৬ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
গাজীপুর-২ আসনের সীমানা হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড (সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়ন), ১৩ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন।
এই আসনে মোট ভোটার পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৪৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৬১ হাজার ২০৪ জন। নারী ভোটার দুই লাখ ৬৭ হাজার ২৫৯ জন। আর তৃতীয় লিঙ্গের আটজন।
আসনটিতে শুরু থেকেই মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন বিএনপির প্রায় ডজনখানেক প্রার্থী। মনোনয়ন পেতে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আফজাল হোসেন কায়সার, আলাউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হান্নান মিয়া হান্নু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিনের ছেলে রায়হান আহমেদ হৃদয়, মহানগর জাসাসের আহ্বায়ক সৈয়দ হাসান জুননুরাইন সোহেল এবং বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ প্রচারণা চালিয়েছেন তুঙ্গে।
তবে শেষমেশ দলের টিকিট পাচ্ছেন এম মঞ্জুরুল করিম রনি। সোমবার (৩ নভেম্বর) সারাদেশের ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এর মধ্যে রনির নাম রয়েছে।
আরও পড়ুন:
অনিয়ম হলে পুরো নির্বাচনি এলাকার ফল বাতিল করতে পারবে ইসি
যে কারণে ৬৩ আসনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি
৪ ভাগে বিভক্ত বিএনপি, নির্ভার জামায়াত
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন
তানিয়া রবের জন্য আসন ছেড়ে দিলে মানবেন না বিএনপির নিজান
মঞ্জুরুল করিম রনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে আছি। আমার বাবা সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মেয়র এম এ মান্নান যেভাবে জনগণের পাশে থাকতেন, আমিও সে পথ অনুসরণে করছি। আমার বাবা গাজীপুরে যেভাবে উন্নয়ন করেছিলেন, সুযোগ পেলে আমি তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।’
এই আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির হোসেন আলীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা এম এ হানিফ সরকার, গণঅধিকার পরিষদের আব্দুর রহমান এবং নাগরিক ঐক্যের ডা. রাশেদুল হাসান রানা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে গাজীপুর-২ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। এ আসনের মধ্যে রয়েছে জেলা শহর, আদালত, সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, ডুয়েট, টাকশাল, সমরাস্ত্র কারখানা, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তর, সিটি করপোরেশনের নগর ভবন, রেল জংশন, চান্দনা চৌরাস্তা, বিশাল শিল্প এলাকা। শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় সারাদেশের মানুষের বসবাস এখানে।
ভোটাররা বলছেন, এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর ভোটারও অনেক। গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও এমপি প্রার্থী মুহাম্মদ হোসেন আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘জনগণ পরিবর্তন চায়। এবারের নির্বাচনে জনগণ তাদের যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে বেছে নিতে পারার সুযোগ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী দেশের ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।’
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা এম এ হানিফ সরকার বলেন, ‘এবার ইসলামের পক্ষে জাগরণ সৃষ্টি হবে। জনগণ ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আশা করি এ আসন থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হবে।’
নাগরিক ঐক্যের ডা. রাশেদুল হাসান রানা বলেন, ‘জনগণ এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। আশা করছি জনগণ এবার আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’
ভোটারদের কথা
জয়দেবপুর শহরের ভোটার মেহেদি হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাজীপুর-২ আসনে ভোটের মাঠে বিএনপির প্রার্থী বেশি। তাই প্রচারণাও বেশি। অন্যান্য দলও প্রচারণা চালাচ্ছে। যোগ্য প্রার্থী দেখেই ভোট দেবো।’
পোশাককর্মী রুবিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকরা নিরাপত্তা ও সঠিক সময়ে বেতন-ভাতা চাই। যারা আমাদের এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন, আমরা তাদেরকেই ভোট দেবো।’
নতুন ভোটার মিথিলা আক্তার বললেন, ‘এবার আমরা প্রথম ভোট দেবো। যার জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকবে, সেই প্রার্থীকেই ভোট দেবো। কারণ প্রথম ভোটটি বিফলে যাক সেটা চাই না।’
গৃহবধূ সাবিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক বছর ভোট দিতে পারিনি। এবার ভোট দেওয়ার পরিবেশ থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবো।’
এমএআই/এসআর/এমএমএআর/এমএস

13 hours ago
4









English (US) ·