হাতের প্রতিটি নড়াচড়া, মুখের প্রতিটি অভিব্যক্তি—এগুলোই তার ভাষা। শব্দহীন অথচ গভীর অর্থে পরিপূর্ণ এক ভাষা। মালয়েশিয়ার বিখ্যাত সাইন ল্যাংগুয়েজ ইন্টারপ্রেটার তান লি বি এবার পা রাখছেন জীবনের সবচেয়ে বড় মঞ্চে—৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট শীর্ষ বৈঠকগুলোতে, যা এই সপ্তাহান্তে কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
৬৪ বছর বয়সী তান লি বি, যিনি মালয়েশিয়ার টেলিভিশন দর্শকদের কাছে বহু পরিচিত মুখ, এবার ইতিহাস গড়তে চলেছেন। কারণ, তিনিই হচ্ছেন আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাইন ল্যাংগুয়েজ ইন্টারপ্রেটার। নিজের ৪৫ বছরের কর্মজীবনের অন্যতম গর্বের অর্জন বলেই তিনি একে বর্ণনা করেছেন।
‘আমি ২৬ অক্টোবর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ২৮ অক্টোবর সমাপনী অনুষ্ঠানে অনুবাদ করব। বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে কাজ করা আমার জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা,’— বলেন তান, বারনামা নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।
তিনি জানান, এ বছর মালয়েশিয়া শুধু আসিয়ানের চেয়ার দেশ হিসেবেই নয় বরং প্রথমবারের মতো সাইন ল্যাঙ্গুয়েজকে আসিয়ান মঞ্চে স্থান দিয়েছে, যা আঞ্চলিক কূটনীতিতে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
এই উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে। আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা মালয়েশিয়ার ‘অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন’ থিমের প্রতি অঙ্গীকার হিসেবে এ উদ্যোগকে উচ্চ প্রশংসা করেছেন।

সম্মেলনের প্রস্তুতিতে তান লি বি গত কয়েক মাস ধরে গভীর মনোযোগে কাজ করেছেন—আসিয়ান নেতাদের বক্তব্য, অফিসিয়াল নথি ও ভাষণ বিশ্লেষণ করেছেন যেন তার অনুবাদে থাকে যথার্থতা ও সামঞ্জস্য।
‘সাইন ল্যাংগুয়েজ কোনো অভিধান নির্ভর নয়। আমাকে বক্তার ভাব ও প্রেক্ষাপট বুঝে নিতে হয়। এজন্য আমি ইউটিউবে আসিয়ান নেতাদের বক্তব্যও দেখি,’— বলেন তিনি হাসিমুখে। তান জানান, তিনি আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যও নিচ্ছেন। ‘আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যেমন ChatGPT ব্যবহার করি, যেন কিছু বিশেষ শব্দ বা ধারণার সঠিক অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়।’
তান লি বি’র এই যাত্রা শুরু হয়েছিল তার শ্রবণপ্রতিবন্ধী ছোট ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। সেই ভালোবাসাই তাকে সাইন ল্যাংগুয়েজ ও বিশেষ শিক্ষার পথে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি ১৭ বছর শিক্ষকতা করেছেন।
১৯৮০-এর দশকে ‘সেলামাত পাগি মালয়েশিয়া’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। পরে তিনি RTM’র রাতের সংবাদে সাইন ল্যাংগুয়েজ ইন্টারপ্রেটার হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।
তার ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৯৪ সালে ফেডারেল কোর্টে মালয়েশিয়ার প্রথম সাইন ল্যাংগুয়েজ ইন্টারপ্রেটার হওয়া। এরপর তিনি মন্ত্রী, বিচারক ও সংবাদ পাঠকদের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু শব্দ নয়, আবেগ ও অর্থও অনুবাদ করেছেন।
এখন, যখন বিশ্বনেতারা কুয়ালালামপুরে সমবেত হচ্ছেন, তান লি বি আবারও কথা বলবেন—নিঃশব্দে, কিন্তু গভীর শক্তিতে।
এক এমন ভাষায়, যার শব্দ শোনা না গেলেও অনুভব করা যায় হৃদয়ে।
এমআরএম/এএসএম

2 weeks ago
6









English (US) ·