কমিউনিটি ক্লিনিকে অর্ধেকের বেশি রোগী ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ত্বকের সমস্যায়: জরিপ
বাংলাদেশ
সমকাল প্রতিবেদক 2025-11-05গ্রামীণ পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা অর্ধেকের বেশি রোগীই ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি করা এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
জরিপটি পরিচালনা করেছেন জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেটা-ড্রিভেন ইনোভেশন ইনিশিয়েটিভের সহযোগী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম মারুফ। দেশের ৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডারদের (CHCP) অংশগ্রহণে ২০২৫ সালের ১ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালিত হয়।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর বিএমআরসি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মারুফ। তিনি জানান, এই জরিপটি তিন ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপে ৪২ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে—তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ পুরুষ ও ৪০ শতাংশ নারী। প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
গ্রামীণ পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ত্বকের রোগ
জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীণ এলাকায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ত্বকের রোগ (৩৬%), ইনফ্লুয়েঞ্জা (২১%) ও জ্বর (২১%)। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ (১৯%) ও ডায়াবেটিস (১৪%)–এর মতো অসংক্রামক রোগও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে।
রোগীর চাপ ও সেবার ধরন
জরিপ অনুযায়ী, বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিদিন ৩১ থেকে ৪০ জন রোগী দেখেন। সপ্তাহের সবচেয়ে ব্যস্ত দিন রবিবার, আর রোগীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে।
মূলত মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, টিকাদান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং অসংক্রামক রোগ ব্যবস্থাপনাই এসব ক্লিনিকের প্রধান সেবা।
ওষুধ ও সরঞ্জামের সংকট
জরিপে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, ওষুধের ঘাটতি একটি বড় সমস্যা। আর ২৪ শতাংশ জানিয়েছেন, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবই এনসিডি (NCD) ব্যবস্থাপনায় প্রধান বাধা।
বেশিরভাগ ক্লিনিকে রক্তচাপ মাপার মেশিন, গ্লুকোমিটার, থার্মোমিটার ও স্টেথোস্কোপ থাকলেও অনেক যন্ত্রই ভাঙা বা অনুপস্থিত। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় যন্ত্র হলো রক্তচাপ মাপার মেশিন।
পরামর্শ ও রেকর্ড সংরক্ষণ
অনেক স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, সময়ের অভাব, প্রশিক্ষণ উপকরণের সংকট এবং রোগীদের সীমিত বোঝাপড়া কার্যকর কাউন্সেলিংয়ে বাধা তৈরি করছে।
রেকর্ড সংরক্ষণ বিষয়ে ৬৪ শতাংশ বলেছেন বড় কোনো সমস্যা নেই, তবে ২৪ শতাংশের মতে কাগজপত্রের কাজ সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।
বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা
অধ্যাপক মারুফ জানান, টেলিমেডিসিন সম্পর্কে রোগীদের সচেতনতা ও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তবে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত, ব্যাকআপ ব্যবস্থা সীমিত এবং ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল।
এর ফলে এখনও ইলেকট্রনিক রেকর্ড সিস্টেম চালু করা সম্ভব হয়নি। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ভবিষ্যতে ডিজিটাল রেকর্ড রাখতে আগ্রহী, তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, দুর্বল নেটওয়ার্ক ও প্রশিক্ষণের অভাবকে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন।
টেলিমেডিসিনে আশার আলো
জরিপে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগী উভয়েই টেলিমেডিসিন সেবার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
৯৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী জানিয়েছেন, সপ্তাহে ১০টি পর্যন্ত অনলাইন পরামর্শ পরিচালনাযোগ্য। রোগীদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রতি সেশন ৫০ টাকার কম দিতে রাজি। তবে কিছু স্বাস্থ্যকর্মী বাড়তি কাজের চাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গবেষক দলের মতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে যথাযথ চিকিৎসা সরঞ্জাম, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি।
তাদের মতে, ডিজিটাল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মূল স্বাস্থ্যচাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
© Samakal
2 days ago
2








English (US) ·